ঢাকার 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশে

বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও সোয়ে মোয়ে এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৪।

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে সংঘাতের কারণে সম্প্রতি ৪০ হাজারের বেশি মিয়ানমারের নাগরিকের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও সোয়ে মোয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, “উভয় দেশের জন্যই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেন। একইসঙ্গে মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সাক্ষাৎকালে তারা রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ায় দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা দরকার।

অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সৃষ্ট অসুবিধাগুলোর কথা স্বীকার করেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আরাকান আর্মির যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবাসনে দেরি হয়েছে।

মিয়ানমার সরকার ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনেরা এ সংকট সমাধানে শিগগিরই গঠনমূলক সংলাপে বসবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

মানব পাচার বৃদ্ধিসহ সীমান্ত পরিস্থিতির অস্থিরতা থেকে সৃষ্ট নিরাপত্তাবিষয়ক ঝুঁকিগুলো তুলে ধরেন তিনি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। মিয়ানমারকে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে মিয়ানমারের সমর্থনও চান তিনি।

তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ঢাকা ও ইয়াঙ্গুনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা করেন।

তারা দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে আলোচনাধীন উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি চূড়ান্তকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সম্প্রতি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি তার সরকারের কৃতজ্ঞতা জানান রাষ্ট্রদূত কিয়াও সোয়ে মো।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ

এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।

জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।

আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে।

মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

পরবর্তীতে সংঘর্ষের কারণে কয়েক দফায় আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।