লেবাননে বুধবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন নিহত হয়েছেন দক্ষিনাঞ্চলের একটি শহরে, যেখানে অতীত সংঘাতে ইসরায়েলি বোমা হামলার কথা মানুষের স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে ।
অপর ছয়জন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নাবাতিয়েহতে বিমান হামলায় নিহত হয়। সেখানে এর আগে ইসরায়েলি হামলায় শত বছরের পুরনো একটি বাজার ধ্বংস হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে শহরের মেয়রও রয়েছেন।
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিবমিকাতি অভিযোগ করেন, ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে আলোচনার জন্য পৌর সভার বৈঠককে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু’ বানিয়েছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব’ রয়েছে।
“এই বাস্তবতার আলোকে কী সমাধান করা যেতে পারে?” এক বিবৃতিতে তিনি প্রশ্ন করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কোন প্রমাণ না দেখিয়ে বলেছে, বুধবারের হামলায় তারা হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টার এবং নাবাতিয়েহের বেসামরিক এলাকায় মোতায়েন করা অস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
ছয় দিনের বিরতির পর ইসরায়েল বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে পুনরায় হামলা চালিয়েছে। তারা কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে বলেছে, একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের নিচে একটি অস্ত্র গুদামে হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছিল। হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কানায় হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া এপির ছবি ও ভিডিওতে কয়েকটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত ভবন দেখা যাচ্ছে এবং অন্য কিছু ভবন যেগুলোর উপরের তলাসহ ধসে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা মৃত ব্যক্তিদের দেহাবশেষ নিয়ে যায় এবং ধ্বংসাবশেষ সরাতে বুলডোজার ব্যবহার করে আরও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সন্ধান করে।
কানায় ১৯৯৬ সালে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষের আবাসস্থল জাতিসংঘের একটি কম্পাউন্ডে ইসরায়েলি আর্টিলারি গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১০০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত এবং জাতিসংঘের চারজন শান্তিরক্ষীসহ আরও বহু মানুষ আহত হয়।
এর পরে ২০০৬ সালের যুদ্ধের সময় একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৬ জন মানুষ নিহত হয়, যাদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু। ইসরায়েল সে সময় জানিয়েছিল, তারা ভবনটির পেছনে হিজবুল্লাহর একটি রকেট লঞ্চারে আঘাত হেনেছে।
হামাসের সাথে সংহতি
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করার লক্ষে হিজবুল্লাহ ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে।
এক বছর ধরে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত বরাবর স্বল্প মাত্রার সংঘাত চলার পর গত মাসে তা পূর্ণ যুদ্ধের রূপ নেয়। অক্টোবরের শুরুতে ইসরায়েল লেবাননের ভেতরে আগ্রাসন শুরু করে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং তাদের বেশির ভাগ সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলেছে, যতদিন না ইসরায়েলিরা সীমান্তের কাছে তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরতে পারছে, ততদিন তারা অভিযান চালিয়ে যাবে।
গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে এ’পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ২,৩০০ জন নিহত হয়েছে বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের তিন-চতুর্থাংশ গত এক মাসে মারা গেছেন।
চলমান লড়াই-এর ফলে লেবাননে ১২ লক্ষ মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছেন।
গত এক মাসে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা আরও তীব্র হয়েছে এবং ইসরায়েলের আরও গভীরে আঘাত হানছে। হামলার কারণে ৬০,০০০ ইসরায়েলি উত্তরাঞ্চলে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েলের ভেতরে হিজবুল্লাহর আক্রমণে ৬০ জন নিহত হয়েছে যাদের অর্ধেক সৈন্য।
হিজবুল্লাহ বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা আক্রমণ অব্যাহত রাখবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনা থেমে যাওয়ার পর গাজায় যুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ মন হচ্ছে।