নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী শিশু (১৬ বছর)।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে কয়েক হাজার লোক সোনাইমুড়ী উপজেলা সদরের রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করে। সেই মিছিলটি থেকে একটি অংশ সোনাইমুড়ী থানাকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন থানার ভেতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন।
এতে উত্তেজিত জনতা দল বেঁধে থানা ঘেরাও করে হামলা-ভাঙচুর চালালে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। হামলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পুলিশের এসআই মোহাম্মদ বাছির ও কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিহত হন।
ওইদিন থানা থেকে বেশকিছু অস্ত্র-গুলিও লুট হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ঘটনার ১০ দিন পর পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোরশেদ আলম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “গত ১০ অক্টোবর পুলিশ হত্যা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন নাহিদুল ইসলাম (১৬), নাইম হোসেন (২১) ও ইমাম হোসেন ইমন (২২)।”
তিনি জানান, “হত্যার শিকার পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের একটি সূত্র ধরে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে নিহত পুলিশ সদস্যের ব্যবহৃত ম্যানিব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে।”
“গ্রেপ্তারকৃতদের ১১ অক্টোবর আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেন” বলে উল্লেখ করেন ওসি মোরশেদ আলম।
ওসি মোরশেদ আলম বলেন, “হত্যার দায় স্বীকার করার পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা কারাগারে আছেন।”
পুলিশ বলছে, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ম্যানিবাগে থাকা টাকার ভাগাভাগি নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথপোকথনের একটি অডিও পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃত নাইম হোসেন থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের সঙ্গে ফেসবুকে একটি ছবিও পোস্ট করেছে।
ওসি মোরশেদ আলম বলেন, “গ্রেপ্তার যুবকেরা থানা থেকে লুট করা অস্ত্রের ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেছে।”
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারকৃতরা কেউ ছাত্র নয়। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নয়। এরা মূলত 'বখাটে।' তারা কেউ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কও নয়।”
এর আগে গতকাল শনিবার নোয়াখালী নিজ কার্যালয়ে জেলার এসপি মো. আব্দুল্লাহ আ ফারুক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বৃহস্পতিবার পৃথকস্থানে অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “নাইম হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র হাতে ছবি পোস্ট করেছিলেন। ওই ছবির সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাইমুড়ী বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে ইমাম হোসেন ইমনকে একই দিন সন্ধ্যায় জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমনের দেওয়া তথ্যে একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন নাহিদুল।”