গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি ট্যাংকের জোরালো অভিযান

ফাইল ছবি - ইসরায়েলি সৈন্যদের কর্মরত দেখা যাচ্ছে, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। 

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে তাদের অভিযান প্রসারিত করেছে, এবং ট্যাংকগুলি গাজা শহরের উত্তর প্রান্তে পৌঁছেছে। বাসিন্দারা জানায় ট্যাংকগুলি শেখ রাদওয়ানের আশেপাশের কয়েকটি অঞ্চল গুড়িয়ে দিয়েছে এবং অনেক পরিবারকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে।

বাসিন্দারা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী কার্যকরভাবে গাজা শহর থেকে ছিটমহলের উত্তরে বাইত হানুন, জাবালিয়া এবং বাইত লাহিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই তিনটি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। যে সকল পরিবার ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের ইসরায়েলি বাহিনী থেকে অনুমতি নিয়ে এলাকা থেকে বের হওয়া ছাড়া এ দুটি এলাকার মধ্যে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

হামাস পরিচালিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি বড় ইসরায়েলি অভিযানের এই নয় দিনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানে প্রায় ৩০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তারা বলেছে, বেসামরিক বাড়িঘর এবং শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল বাসিন্দাদের একেবারে সব সময়ের জন্য গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা। কিন্তু, ইসরাইল তা অস্বীকার করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, উত্তরাঞ্চলে হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও কয়েক ডজন মানুষ সড়কে এবং চিকিৎসক দলের নাগালের বাইরে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাবালিয়ার অনেক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন: "আমরা ছেড়ে যাব না, আমরা মরবো, এবং আমরা চলে যাবো না।"

গাজার উত্তরাঞ্চল হল গাজা ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ জনগণের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বাসস্থান। এক বছর আগে গাজার উত্তরাঞ্চল ইসরায়েলের আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ অক্টোবরের বিদ্রোহীরা ইসরায়েলি শহরে হামলা করে এবং ১,২০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫০ জন জিম্মিকে বন্দী করে।

ইসরায়েলি হামলার এক বছরের মধ্যে তারা ৪২,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। হামলার এক বছর পর কয়েক লাখ বাসিন্দা ধ্বংসপ্রাপ্ত উত্তরাঞ্চলে ফিরে এসেছে। ইসরায়েল এক সপ্তাহেরও বেশি আগে যোদ্ধাদের নির্মূল করতে সৈন্য পাঠায়। ইসরায়েল বলে, তারা আরও হামলা করার জন্য পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। হামাস যোদ্ধারা বেসামরিকদের মধ্যে কাজ করার কথা অস্বীকার করে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

ইসরায়েল উত্তর গাজার উত্তরাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে একটি পৃথক ফ্রন্টে ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান চালাচ্ছে। হামাসের মতো হিজবুল্লাহও ইরানের মিত্র।

ইসরায়েল মূলত উত্তর দিকে হামলা চালালেও, ইসরায়েল গাজা ভুখন্ডের অন্যান্য এলাকাতেও হামলা চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার দুপুরের আগ পর্যন্ত গাজা শহরের দক্ষিণে মধ্য গাজা ভুখন্ডের বুরেজ ক্যাম্পের একটি বাড়িতে কমপক্ষে ছয়জন সহ কমপক্ষে ১১ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার এক বিবৃতিতে বলে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভুখন্ড জুড়ে পরিচালিত সেনাবাহিনী প্রায় ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে এবং কয়েক ডজন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা, ইসলামিক জিহাদ, এবং অন্যান্য ছোট দলগুলি বলে, তাদের যোদ্ধারা জাবালিয়া এবং আশেপাশের এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর উপর ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট এবং মর্টার ফায়ার দিয়ে হামলা চালায়।

ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় কোনো নিরাপদ এলাকা নেই। তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরবরাহের তীব্র ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বলে, সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।