বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যয় বন্টন চুক্তির ভবিষ্যত অনিশ্চিত

ফা্ইল- কোরিয়ার নৌ-সেনারা দক্ষিণ কোরিয়ার পোহাং-এ দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্থলবাহিনী সমুদ্রপথে আক্রমণ পরিচালনায় উভচর যান থেকে অবতরণের একটি যৌথ সামরিক মহড়ার সময় সমুদ্র সৈকতে অবতরণ করার পরে উভচর হামলার যান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসছে, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছর হোয়াইট হাউসে আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে নতুন ব্যয় বন্টনের চুক্তিটি টিকে থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ চুক্তিটিকে “একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন” বলে অভিহিত করেছে।

পাঁচ বছরের বিশেষ ব্যবস্থা চুক্তি বা এসএমএ-এর খসড়া গত সপ্তাহে সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সাল থেকে এটি কার্যকর হবে। এ চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রথম বছরে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের অবস্থানের খরচে তাদের অবদান ৮.৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪৭ কোটি ডলার করতে হবে।

দুই মিত্র দেশ প্রত্যাশিত সময়ের আগেই তাদের মধ্যে এই চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সোওল এবং ওয়াশিংটনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির একজন প্রার্থী।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪ অক্টোবর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে চুক্তিটিকে “উভয় পক্ষের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

তবে ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং প্রার্থী উভয় হিসেবেই ক্রমাগত দাবি করে আসছেন যেন দক্ষিণ কোরিয়া, কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে তাদের ব্যয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বেশি অবদান রাখে। সম্প্রতি এপ্রিলে ট্রাম্প টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, “আমি চাই দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের সাথে যথাযথভাবে আচরণ করুক।” তিনি আরও বলেন, সোওল দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের জন্য “কার্যত কিছুই পরিশোধ করছে না”।

ট্রাম্প ফ্যাক্টর

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় হোয়াইট হাউসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন শুক্রবার ভিওএ কোরিয়ান বিভাগকে ফোনে বলেন, “খুব সম্ভবত ট্রাম্প আবার চুক্তির কথা পুনর্বিবেচনা করতে বলবেন।”

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের উত্তর-পূর্ব এশিয়ার সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ব্রুস ক্লিংনার উল্লেখ করে বলেন, চুক্তিটি "একটি নির্বাহী সমঝোতা"। ফলে, ট্রাম্পের পক্ষে চুক্তিটি বাতিল করা সহজ কারণ এতে কংগ্রেসের অনুমোদনের কোনও প্রয়োজন নেই।

রবার্ট র‍্যাপসন ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সোওলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে উপরাষ্ট্র দূত এবং সহকারী মিশন প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত সপ্তাহে ভিওএ’র কোরিয়ানকে বিভাগকে বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট নভেম্বরে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হন তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে চুক্তিটি সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হবে না।

র‍্যাপসন বলেন, “নিরাপত্তার বোঝা ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের কাছে তার দাবি এবং প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে, আমার দৃঢ় আশঙ্কা হল যে তিনি আরও অনেক বেশি ব্যয় চেয়ে আজকের চুক্তিটি পুনরায় আলোচনা করতে চাইবেন।” র‍্যাপসন এসএমএ-এর ২০১৩-১৪ এবং ২০১৯-২১ সালের দুটি ধাপের সাথেই সরাসরি জড়িত ছিলেন।

'এটা আমাদের স্বার্থে'

ক্লিংনারের মতো অন্যান্য সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ব্যয়-বন্টন চুক্তি সংশোধন করার চেষ্টা করবেন কিনা সে সম্পর্কে এখনই বলা সম্ভব নয়।

রিচার্ড আরমিটেজ জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সময় উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বুধবার ফোনে ভিওএ কোরিয়ানকে বলেন, “তিনি চেষ্টা করতে পারেন, তবে এত তাড়াতাড়ি সেটা নিয়ে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।”

ভিওএ ‘র কোরিয়ান বিভাগ এই সপ্তাহে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের সাথে যোগাযোগ করে এবং সদ্য উপনীত চুক্তিতে ট্রাম্পের অবস্থান কী তা জানতে চায়। কিন্তু, এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তাদের থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

জোইউন লি ভিওএ-এর কোরিয়ান সার্ভিসের লিখিত এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।