শান্তিতে নোবেল পেল পরমাণু বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া জাপানি একটি সংগঠন

কিয়োডোর তোলা এই ছবিতে, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া নিহন হিদানকিওর সহ-সভাপতি তোশিয়ুকি মিমাকি, ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর ঘোষণার পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।(১১ অক্টোবর, ২০২৪)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকির পরমাণু বোমা থেকে বেঁচে যাওয়া কিছু নাগরিককে নিয়ে গঠিত জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিওকে ২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস এ পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সংগঠনটি "প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানকে সবার সামনে এনে প্রমাণ করেছে যে আর কখনোই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে না।" এ কারণেই তারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছে।

১৯৪৫ সালে আমেরিকার দুটি পারমানবিক বোমা জাপানের উপর ফেলা হলে প্রাথমিকভাবে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে পোড়া এবং বিকিরণের প্রভাবে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ আরও মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময়ের বিভীষিকার আঁচড় আর স্মৃতি বহন করে জাপানে আরও প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ এখনো বেঁচে আছেন। তারা হিবাকুশা নামে পরিচিত।

নোবেল কমিটির এক বিবৃতি মতে, পারমাণবিক বোমা হামলার ভয়াবহতা থেকে যারা বেঁচে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাদেরকে দীর্ঘদিন লুকিয়ে রাখা এবং অবজ্ঞা করা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার ক্ষতির সম্মুখীন মানুষদের নিয়ে গঠিত স্থানীয় হিবাকুশা সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে পরে জাপানি ভাষায় নিহন হিদানকিও নামে পরিচিত হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তৃণমূল আন্দোলন থেকে শুরু করে এটি শীঘ্রই জাপানের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক প্রতিনিধিত্বকারী হিবাকুশা সংগঠনে পরিণত হয়। এর প্রধান দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে: জাপানের বাইরে বসবাসকারী সহ সমস্ত হিবাকুশার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রচার করা এবং আর কখনও কেউ পারমাণবিক অস্ত্রের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া ২০২০ সালের এক সাক্ষাৎকারে নিহন হিদানকিয়োর সদস্য ৭৪ বছর বয়সী জিরো হামাসুমি বলেছিলেন, “আমরা যদি কথা না বলি, তাহলে বোমা হামলার কথা সকলে এমনভাবে ভুলে যাবে যেন এটা কখনো ঘটেনি। আমাদের ইতিহাস ও জনগণের সাক্ষ্য তাই সংরক্ষিত করে রাখতে হবে।”

বিশ্বের চলমান অস্ংখ্য সংঘাত আর যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকির ব্যপারে উদ্বেগ জানিয়ে তারা বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহারের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার এক বিবৃতিতে, নিহন হিদানকো সংস্থাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে তাদেরকে “পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহ মানবিক মূল্যের নিঃস্বার্থ, জীবন্ত সাক্ষী” বলে অভিহিত করেন। তিনি তাদেরকে “বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনের মেরুদণ্ড” বলেও অভিহিত করেন।

গুতেরেস বলেন, “ এখন বিশ্ব নেতাদের হিবাকুশার মতো খোলা চোখে দেখতে হবে , দেখতে হবে পরমাণু অস্ত্র কিসের জন্য, এ গুলো হচ্ছে : মৃত্যুর যন্ত্র যা কোন রকম নিরাপত্তা, কিংবা সুরক্ষা প্রদান করে না পরমাণু অস্ত্রের হুমকি বন্ধ করার এক মাত্র উপায় হচ্ছে , সেগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা”।

পুরস্কারের ১ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার বিজয়ীদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করে দেয়া হয়।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় সাহিত্য, চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে। আগামী সোমবার দেওয়া হবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা আসবে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার হস্থান্তর করা হবে। বাকি সব পুরস্কারও স্টকহোমে একই দিন প্রদান করা হবে।

এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য এপি, এ এফপি এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।