দশমী পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম

ঢাকেশ্বরী মন্দির পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ১০ অক্টোবর, ২০২৪।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দুর্গাপূজার দশমী পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এরপরও চলমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে ১৭ কোটি লোক ৩৬৫ দিনই নিরাপদে থাকবে। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা নিরলসভাবে সে প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছি।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী মন্দির পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, "সরকার পূজার জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর আগে প্রতি বছর দুর্গাপূজায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো। এ ছাড়া, চলমান দুর্গাপূজায় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মহাসচিব সন্তোষ শর্মাসহ অন্য নেতারা আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।"

উপদেষ্টা আরও বলেন, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে করার লক্ষ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে।

পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর

এদিকে গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

বিগত কয়েক দিনে কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে৷ এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে গত ১৫ দিনে বাংলাদেশে ১৯টি পূজামণ্ডপে ভাঙচুর হয়েছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানাদাশ গুপ্ত ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে গত ১৫ দিনে দেশের ১৪ টি জেলায় ১৯টি পূজামণ্ডপে পূজোর প্রতিমাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।”

এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ভয়, আতঙ্ক ও মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ভয়েস অফ আমেরিকাকে “দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে” উল্লেখ করে বলেন, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তো একটা ট্রমার মধ্যে আছে। তারা পূজা করতেও চায়, আবার করতে গেলে হামলার আশঙ্কা মধ্যেও আছে। এখন তারা দোটানায় মধ্যে আছে।”

“এবার পূজা কতটা উৎসবমুখর হবে (তা) বলতে পারব না। তবে, পূজাকে কেন্দ্র করে ভয় এবং আতঙ্কে আছে সংখ্যালঘুরা” বলে যোগ করেন রানা দাশগুপ্ত।

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

বাংলাদেশে মূর্তি ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে, "এ ধরনের ঘটনা ঠিক নয় এবং এগুলো ভালো নয়।"

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, "আমি আরও বলতে চাই যে আমরা যখন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলি, তখন এর মধ্যে দুর্গাপূজা এবং দশমী সম্পর্কেও আমাদের উদ্বেগ অন্তর্ভুক্ত থাকে।’

মুখপাত্র বলেন, "আমরা আশা করি যে সেখানে (বাংলাদেশে) সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের নিরাপত্তা দেবে এবং তাদের চাহিদা পূরণ করবে।"

নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ৩০ মে, ২০২৪।

৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর হামলার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে সোমবার (৭ অক্টোবর) বলেন, “কোনো পূজামণ্ডপে হামলা হলে সেটা বাংলাদেশের সরকার দেখবে। এটা নিয়ে অন্য কোনো দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ১৮ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, ৪ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

তাদের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে ৯ জনকে হত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ/গণধর্ষণ, ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ; ৯১৫টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; ৯৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; বসতবাড়ি দখল একটি; ৩৮টি শারীরিক নির্যাতন এবং ২১টি জমি/ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ার সেনেটর বেন কার্ডিন এবং সদস্য সেনেটর ক্রিস মারফি, সেনেটর ভ্যান হলেন ও সেনেটর জেফ মার্কলি যৌথভাবে এক চিঠিতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া ও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।