জাতিসংঘের তীব্র নিন্দা সত্ত্বেও ৯ জন আফগান নারী-পুরুষকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করলো তালিবান

ফাইল- পারওয়ান প্রদেশের চারিকার শহরের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে তালিবান নিরাপত্তা কর্মীরা নারী ও পুরুষদের বেত্রাঘাত করার আগে নজর রাখছেন। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর ।

আফগানিস্তানের কট্টরপন্থী তালিবান কর্তৃপক্ষ বুধবার জানায়, ব্যভিচারসহ বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অন্তত দুজন নারীসহ নয়জনকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।

তালিবানের সুপ্রিম কোর্ট বিস্তারিত জানায়। তারা বলে পাঁচজনকে ব্যভিচার, সমকামিতা এবং ডাকাতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ৩৯টি বেত্রাঘাত এবং দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে নারী আছে কি না সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ তাখার ও সামানগানে ব্যভিচারের অভিযোগে বুধবার দুই পুরুষ ও নারীকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয়েছে বলে আদালত পৃথকভাবে ঘোষণা করেছে।

২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্রীড়া স্টেডিয়ামে শত শত নারী-পুরুষকে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।

চলতি বছরের জুনে ইসলামপন্থী নেতারা ব্যভিচার ও সমকামিতার মতো ‘অনৈতিক অপরাধের’ দায়ে উত্তরের জনবহুল এক স্টেডিয়ামে ১৪ জন নারীসহ ৬৩ জনকে গণবেত্রাঘাত করে।

তালিবান কিসাস নামে পরিচিত প্রতিশোধমূলক ন্যায়বিচারের ইসলামী ধারণার কথা উল্লেখ করে জনাকীর্ণ ক্রীড়া স্টেডিয়ামে হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত কমপক্ষে পাঁচজন আফগানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ

এই মৃত্যুদণ্ড এবং শারীরিক শাস্তি মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বলে অবিলম্বে এই শাস্তিগুলোর অবসানের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও আহ্বান জানানো হয়েছে।

তালিবান নেতারা তাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে রক্ষা করে যুক্তি দেখিয়েছেন, এটি ইসলামি শরিয়া আইনের ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা আফগান নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জনজীবনে প্রবেশাধিকারের উপর তাদের বিধিনিষেধের সমালোচনারও প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন উদ্বেগের মধ্যে নারীদের প্রতি আচরণের কথা উল্লেখ করে তালিবান কর্তৃপক্ষকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে।

১২ বছর বা তার বেশি বয়সী মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে যাওয়ার অনুমতি নেই- এমন বিধিনিষেধ জারি করা বিশ্বের একমাত্র দেশ হলো আফগানিস্তান। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নারী শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বেশিরভাগ আফগান নারীকে জাতিসংঘসহ সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।