ছেলেধরা গুজবে রেনুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

তাসলিমা বেগম রেনু

ঢাকার বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনুকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন আট অভিযুক্ত।

বুধবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তি হলেন ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা। তিনি আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চারজন হলেন রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন ও আসাদুল। রায় ঘোষণার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

খালাস পাওয়া আটজন হলেন সোহেল রানা, মহিউদ্দিন, শাহিন, বাচ্চু মিয়া, শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, বিল্লাল মোল্লা ও মো. রাজু।

এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য ধার্য ছিল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা পিছিয়ে ৯ অক্টোবর ধার্য করে আদালত।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাড্ডায় স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা।

মামলার নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০ জুলাই সকালে উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাসলিমা তাঁর চার বছরের মেয়েকে ভর্তি করানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে যান। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাঁকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করে। এই গুজব দ্রুত বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ নারী-পুরুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তাদের মারধর থেকে রক্ষা করতে তাসলিমাকে স্কুলের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভেঙে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যায়। তারা তাসলিমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে পেটাতে শুরু করে। প্রায় আধা ঘণ্টা নির্যাতনের পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তাসলিমা। ঘটনার পর তাসলিমার ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ শ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন।

২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। হৃদয় ইসলাম ছিলেন মামলার প্রধান অভিযুক্ত।

মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন হৃদয় ইসলাম, রিয়া বেগমসহ তিনজন। তাঁদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, অভিযুক্ত রিয়া বেগম সেদিন উসকানি দিয়েছিলেন। হৃদয় ইসলাম স্কুলের পাশে সবজি বিক্রি করতেন। তিনিই তাসলিমাকে প্রথমে লাঠিপেটা করেন।

নিহত তাসলিমা ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছিলেন। পরে তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। বিয়ের পর তিনি দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।