যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ দেশের ভোটারদের ভুয়া তথ্যর বন্যায় ভাসিয়ে দিতে পারে।
অফিস অফ দ্য ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর সর্বশেষ মূল্যায়ন সোমবার প্রকাশ করা হয়, নির্বাচনের মাত্র ২৯ দিন আগে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা ৫ নভেম্বর দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন এবং বিভিন্ন রাজ্য এবং স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন।
“আমরা দেখছি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে,” একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন।
“তারা বুঝতে পাড়ছে ভোটাররা ইতোমধ্যে ভোট দেয়া শুরু করেছে, এবং তাদের তৎপরতা আরও প্রভাব ফেলবে নির্বাচনের দিন যতই কাছে আসবে,” কর্মকর্তা বলেন। তার মতে, নির্বাচনের দিন থেকে হয়তো তাদের কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে।
“গোয়েন্দা মহল ধারনা করছে, যেসব বিদেশি প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে তারা ভোট গ্রহণ শেষ হবার পর নির্বাচনের ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্য তাদের কাজ চালিয়ে যাবে,” তিনি বলেন।
রাশিয়া, ইরান আর চীন 'দায়ী'
সোমবারের মূল্যায়নের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা নিয়ে কয়েকবার সতর্কতা দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সোমবার বলেন যে, ভোটারদের লক্ষ্য করে প্রভাব বিস্তার করার তৎপরতার বেশির ভাগের জন্য রাশিয়া, ইরান এবং চীন দায়ী। এবং, তারা বলেন, এই দেশগুলোর কেউ তাদের লক্ষ্য বদলেছে বলে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি।
কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। একই সাথে তারা ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের প্রচারণা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কাজ করছে।
ইরানের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হল হ্যারিসকে সাহায্য করে ট্রাম্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, তারা বলেন। উদাহরণ স্বরূপ তারা ট্রাম্প প্রচারণা শিবিরের কম্পিউটার হ্যাক করে তথ্য ফাঁস করে দেয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেন, যে কর্মকাণ্ড তিনজন ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস বাহিনীর পক্ষে চালাচ্ছে বলে তাদের ধারনা।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের ধারনা, চীন এখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে না। তাদের মনোযোগ হল রাজ্য এবং স্থানীয় নির্বাচনে যেসব প্রার্থী চীনের স্বার্থ-বিরোধী, বিশেষ করে যারা তাইওয়ানের পক্ষে সরব, তারা যাতে নির্বাচিত না হন, সে লক্ষ্যে ভোটারদের প্রভাবিত করা।
কংগ্রেস নির্বাচনও 'টার্গেট'
তবে সর্বশেষ মূল্যায়ন কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়া এবং কিউবা কংগ্রেস, রাজ্য এবং স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চীনের সাথে যোগ দিয়েছে।
“মস্কো কংগ্রেস নির্বাচনে প্রভাব ফেলার জন্য, বিশেষ করে যাতে ভোটাররা ইউক্রেন-সমর্থক রাজনিতিক এবং কর্মসূচির বিরোধিতা করে, সেজন্য অনেক ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার ব্যবহার করছে,” গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন।
রাশিয়া, চীন এবং ইরান সবাই এর আগে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ রিপোর্ট নিয়ে ভিওএ রাশিয়া, ইরান এবং কিউবার মন্তব্য চেয়েছে, কিন্তু কোন উত্তর পায় নি।
চীন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নাকচ করে দেয়।
“যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস নির্বাচন নিয়ে চীনের কোনও আগ্রহ নেই, এবং আমাদের কোন ইচ্ছা নাই এবং আমরা এখানে নাক গলাবো না,” লিউ পেঙ্গিউ, ওয়াশিংটনে চীন দূতাবাসের মুখপাত্র ইমেইলে ভিওএ-কে জানান।
“যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কিছু সদস্য তাইওয়ান নিয়ে তাদের ভুল অবস্থান ধরে রাখছেন,” লিউ বলেন। “চীন তার সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা শক্তভাবে রক্ষা করবে, কিন্তু তার মানে এই না যে, চীন কংগ্রেস নির্বাচনে নাক গলাচ্ছে।”