বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আগে দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান।
সোমবার (৭ই অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম বলেছেন, "প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে আনসার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে"।
এর আগে রবিবার (৬ই অক্টোবর) দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় স্মারকলিপিতে।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি তিন স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, "পূজা সামনে রেখে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আনসার ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।"
তিনি জানান, পূজা মণ্ডপে যেমন নিরাপত্তা থাকবে, তেমনি জেলা স্তরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে এবং সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
এছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব মোকাবেলায় বাড়তি জোর দেয়ার কথা বলেছেন।
হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সংবাদ সংস্থা ইউএনবি জানায়ঃ বাংলাদেশে মূর্তি ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে, "এ ধরনের ঘটনা ঠিক নয় এবং এগুলো ভালো নয়।"
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, "আমি আরও বলতে চাই যে আমরা যখন সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলি, তখন এর মধ্যে দুর্গাপূজা এবং দশমী সম্পর্কেও আমাদের উদ্বেগ অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
মুখপাত্র বলেন, "আমরা আশা করি যে সেখানে (বাংলাদেশে) সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের নিরাপত্তা দেবে এবং তাদের চাহিদা পূরণ করবে।"
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ
বিগত কয়েকদিনে কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা ও ফরিদপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷
এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ভয়, আতঙ্ক ও মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ভয়েস অফ আমেরিকাকে “দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে” উল্লেখ করে বলেন, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তো একটা ট্রমার মধ্যে আছে। তারা পূজা করতেও চায়, আবার করতে গেলে হামলার আশঙ্কা মধ্যেও আছে। এখন তারা দোটানায় মধ্যে আছে।”
“এবার পূজা কতটা উৎসবমুখর হবে কিনা বলতে পারবো না। তবে, পূজাকে করে ভয় এবং আতঙ্কে আছে সংখ্যালঘুরা” বলে যোগ করেন রানা দাশগুপ্ত।
পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তা নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ সরকারের
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনকালে একথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
ওদিকে দুর্গাপূজা উদযাপনে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে গত বুধবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।
জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তারা এ ধরনের কমিটি গঠন করবেন।
উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন থাকবে।