পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণ না করার 'পরামর্শ'

রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত দোকানপাটের পাশ দিয়ে দুজন হেঁটে যাচ্ছেন। ফাইল ফটোঃ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

বাংলাদেশে পর্যটকদের অক্টোবরের ৮ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন তিন পার্বত্য জেলার প্রশাসকরা। স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, রবিবার (৬ অক্টোবর) এই অনুরোধ জানানো হয়।

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার প্রশাসকরা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে পর্যটকদের পার্বত্য জেলাগুলোতে না আসার অনুরোধ জানান।

“বিভিন্ন কারণে এ সময় পর্যটকদের তিন পার্বত্য জেলায় না আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে,” বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিনকে উদ্ধৃত করে দ্য ডেইলি স্টার বাংলা জানায়।

ঢাকার শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো জানায়, এই ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হলো এমন সময়ে, যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বৌদ্ধভিক্ষুরা কঠিন চীবরদান উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে কঠিন চীবরদান শুরু হওয়ার কথা।

সম্প্রতি খাগরাছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি এবং বাঙালিদের মধ্যে দাঙ্গায় পাঁচজন নিহত হয়। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে।

গত ৩ অক্টোবর রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সাজেকে পর্যটকদের না যেতে পরামর্শ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির ঘটনা

গত ১৯শে সেপ্টেম্বর একটি মোটরসাইকেল চুড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মোঃ মামুন নামে এক বাঙ্গালি যুবক নিহত হবার পর স্থানীয় বাঙ্গালিরা একটি মিছিল বের করে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় “ইউপিডিএফের (মূল) কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০টি গুলি ছোড়ে।”

আইএসপিআর ভাষ্য মতে, এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।

আইএসপিআর তার বিবৃতিতে আরও জানায়, সেই রাতেই খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে।

গুলিতে ৩ পাহাড়ির মৃত্যু

আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে দাবী করা হয়, “ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা” সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। ওই গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।

পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে পাহাড়িদের আয়োজিত একটি প্রতিবাদ মিছিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনিক কুমার চাকমা নামে একজন কলেজ ছাত্র নিহত হন।

সহিংস এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দুই পার্বত্য জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, যা খাগড়াছড়িতে শুক্রবার রাত ৯ টার পর আর বাড়ানো হয়নি এবং রাঙ্গামাটিতে রবিবার বেলা ১১ টায় তুলে নেয়া হয়।

সহিংসতার ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ভাংচুর ও সহিংসতার ঘটনায় আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মোঃ মামুনের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার তিন জন আওয়ামী লিগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন, যারা ৫ই অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

এর আগে, ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের তৎপরতার কারণে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।