লেবাননের রাজধানীতে ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা, সীমান্তে লড়াই অব্যাহত

দক্ষিণ বৈরুতের শহরতলী দাহিয়েহতে গভীর রাতে বিমান হামলার দৃশ্য। ফটোঃ ৪ অক্টোবর, ২০২৪।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলায় গোটা এলাকা প্রচণ্ড বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। এই সর্বশেষ হামলার লক্ষ্যবস্তু কে ছিল, বা হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষনিক জানা যায়নি।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, “পর পর দশটিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণগুলির অন্যতম।”

বৈরুতে এবং শহরের বাইরে সংবাদ সংস্থা এএফপির সংবাদদাতারা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পায়, যার ফলে দালান-কোঠা কেঁপে উঠে। “ইসরায়েল দক্ষিণ শহরতলীতে পর পর ১১বার হামলা করেছে,” এএফপির এক সূত্র জানায়।

এর আগে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দিনে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭জন নিহত এবং ১৫১জন আহত হয়েছে।

হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলের দাবী

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার বলেছে যে, তারা লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০ হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে। ইসরায়েল বলেছে, তাদের হামলায় ১৫ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষনিক এই দাবী নিশ্চিত করেনি।

হিজবুল্লাহ জানায় তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে মারুন এল-রাস গ্রামে ইসরায়েলি বাহিনী প্রবেশ করলে একটি বোমা বিস্ফোরিত করে। বিস্ফোরণে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে বলে হিজবুল্লাহ জানায়।

দু’পক্ষের দাবী নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা ছবিতে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সৈন্যদের দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ৩ অক্টোবর, ২০২৪।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার আরও জানায়, তারা একজন সিনিয়র হিজবুল্লাহ সদস্য, মোহাম্মাদ আনিসিকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনী বলে, বৈরুতে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা শাখা লক্ষ্য করে হামলায় আনিসি মারা যান।

এ’পর্যন্ত ইসরায়েলি এবং হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে লড়াই সীমান্তের একটি সরু এলাকায় সীমাবদ্ধ আছে। তবে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

ইসরায়েল কয়েক ডজন গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যেতে বলেছে। ইসরায়েল তাদেরকে সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে, লিটানি নদীর আরও উত্তরে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।

জাতিসংঘ প্রস্তাব

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ১৭০১ অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের লিটানি নদীর উত্তর পাশে সরে যাওয়ার কথা ছিল। এই রেজোলিউশনের মাধ্যমে ২০০৬ সালে ইসরায়েলর সাথে হিজবুল্লাহর যুদ্ধের অবসান হয়।

লেবাননের সেনা বাহিনী এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর সীমান্ত এলাকা টহল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা হিজবুল্লাহকে রেজোলিউশনের শর্ত মানতে বাধ্য করতে পারেনি।

ইসরায়েল বলছে, হিজবুল্লাহ রেজোলিউশন লঙ্ঘন করে সীমন্তের কাছে শহর এবং গ্রামে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। লেবানন বলেছে, ইসরায়েল জাতিসংঘ রেজোলিউশনের অন্যান্য অংশ লঙ্ঘন করেছে।

ইসরায়েল বলছে গত বছর ৮ অক্টোবরের পর থেকে রকেট হামলা শুরু হবার পর তারা হিজবুল্লাহকে হামলা করছে। রকেট হামলার কারণে উত্তর ইসরায়েলের ৬০,০০০ বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলার ফলে লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাস্তচ্যুত হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েল বৈরুতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং সিনিয়র হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের হত্যা করেছে।

গত এক বছরে লেবাননে প্রায় ২,০০০ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ গত কয়েক সপ্তাহে মারা গেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।