ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু সফলভাবে আলাদা

ফাইল ফটোঃ ঢাকায় ২০২১ সালে লামিসা (ডানে) এবং লাবিবাকে আলাদা করার জন্য অস্ত্রপচার করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের এক দিন আগে, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ছবি তোলা হয়। সাথে তাদের মা।

জন্ম থেকেই বুক ও পেটে জোড়া লাগানো যমজ শিশুকে সফলভাবে অস্ত্রপচার করে আলাদা করেছে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ একটি দল।

সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সংবাদ সম্মেলন করে এই খবরটি জানিয়েছে।

পৃথক দেহ লাভ করা দুই কন্যা সন্তানের নাম শিফা ও রিফা, তাদের জন্ম হয়েছিল বরগুনার বেতাগী উপজেলায়, তাদের বর্তমান বয়স ১ বছর ৩ মাস।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক সাহনুর ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক সাহনুর ইসলাম জানান, "গত ৭ই সেপ্টেম্বর রিফা ও শিফাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের ৮০ জন চিকিৎসক প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে এই অস্ত্রোপচার করেন।"

শিফা ও রিফার বাবার নাম বাদশা, মায়ের নাম মাহমুদা। এই দম্পতির ছয় বছর বয়সী আরও এক কন্যা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক সাহনুর বলেন, জুন মাসে বুক ও পেট জোড়া লাগানো শিশুদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের সাথে যোগাযোগ করে পরিবার। এরপর একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্রোপচার করা হয়।

অস্ত্রোপচার বেশ জটিল

বুক ও পেট জোড়া লাগানো থাকার কারণে দুই শিশুর নানা প্রত্যঙ্গও জড়িয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এই অস্ত্রোপচার বেশ জটিল ছিল বলছেন অধ্যাপক সাহানুর, অস্ত্রোপচারের পরে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে।

অধ্যাপক সাহানুর ইসলাম বলেন, "যমজ শিশুর জন্মগত ত্রুটি ছিল। এসব রোগীর ক্ষেত্রে কখনো দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না, আবার কখনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হয়।"

ঢাকার পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, শিফা ও রিফার চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেমের ট্রান্সফিউশান মেডিসিন বিভাগ, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা মা।

শিফা ও রিফার বাবা বাদশা ঢাকার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বলেন, তারা গরীব, তাদের জন্য এই চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব হতো না। চিকিৎসকদের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।