বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজায় “সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা” নেয়া হবে এবং পুলিশ “উচ্চ সতর্কাবস্থায়” থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
সোমবার (২৩শে সেপ্টেম্বর) দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব প্রাইডে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সভায় এ কথা বলেন আইজিপি।
পুলিশের নিরাপত্তা প্রস্তুতির ঘোষণা আসছে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর আর মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পটভূমিতে।
আইজিপি জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, পূজা -পূর্ব, পূজা উদযাপন ও পূজা পরবর্তী প্রতিমা বিসর্জন।
বাংলাদেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
হিন্দু মহাজোটের দাবী
এর আগে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট একটি সংবাদ সম্মেলনে, অস্থায়ী ও স্থায়ী পূজা মণ্ডপে সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানায়।
এছাড়া এই সংগঠনটি অনুরোধ করেছে যাতে পেশাদার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, কোনও প্রতিষ্ঠানের ছাত্র দিয়ে নয় ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে।
এই সংবাদ সম্মেলনে দুর্গাপূজায় অন্তত তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশের অভিযান শুরু
সোমবার পুলিশের আইজিপি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পূজার স্থানগুলোতে নিরাপত্তা অভিযান শুরু করা হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
দুর্গাপূজার সময় সোয়াট, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ক্রাইম সিন ভ্যান এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকের পুলিশ প্রস্তুত থাকবে বলে জানান তিনি।
হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা
বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে দুর্গাপূজা এলেই মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার খবর শোনা গেছে।
ঢাকার শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী মন্দির-মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০২১ সালে কুমিল্লায় ১২টি, নোয়াখালীতে ৩২টি, চাঁদপুরে ১০টিসহ মোট ৫৪টি মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামীরা বেশিরভাগই জামিন পেয়েছেন বলে জানাচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
এসব হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার বিচারের দাবিতে ২০২৩ সালে কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
তবে সেই মিছিলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা করে বলে সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজ২৪কে জানায় কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) সঞ্জুর মোর্শেদ।
আবার ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি এবং মন্দিরে হামলার খবর শোনা যায়।
হিন্দুদের একটি সংগঠন জাতীয় হিন্দু মহাজোট এক পরিসংখ্যানে মাধ্যমে দাবি করে, শেখ হাসিনার পতনের পরে ৪৮টি জেলায় ২৭৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ৫২টি জেলায় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।