পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙ্গালিদের মধ্যে চলমান অস্থিরতা ও সহিংস ঘটনার তিন দিন পর সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাঙ্গামাটি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা অটোরিক্সা-ফোর স্ট্রোক সিএনজি মালিক সমিতির সদস্য রবার্ট চাকমা জানিয়েছেন, প্রায় ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের পর সোমবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটিতে যাত্রী নেয়া শুরু করেছে জেলার অটোরিক্সা আর সিএনজিগুলো।
"এই ধর্মঘটের কারণে রুটিরুজিতে প্রভাব পড়লেও আমরা এই কয় দিন নিরাপদ বোধ করিনি," ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন রবার্ট চাকমা। "স্থানীয় প্রশাসন থেকে নিশ্চয়তা দেয়ার পর আমরা রাস্তায় নেমেছি," তিনি বলেন।
এর আগে শুক্র ও শনিবার থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল এই পার্বত্য জেলায়।
রাঙ্গামাটির সর্ব উত্তরে মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্র থেকেও যান চলাচল থমকে থাকায় প্রায় দেড় হাজারের মতো পর্যটক আটকা পড়েছে বলে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো পত্রিকা জানিয়েছে।
পর্যটকদের কেউ কেউ হেলিকপ্টারে ফিরেছেন তবে বাকিদের সোম অথবা মঙ্গলবার স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ফেরত পাঠানো হবে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং পাহাড়ি ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে এখনও রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি রুটে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি উপজেলাতেও সড়কে আজ কোনো যানবাহন চলাচল করছে না বলে জানা গেছে।
এই দীঘিনালা থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি।
খাগড়াছড়িতে ঘটনার সূত্রপাত
গত বৃহস্পতিবার (১৯শে সেপ্টেম্বর) একটি মোটরসাইকেল চুড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মোঃ মামুন নামে এক বাঙ্গালি যুবক নিহত হবার পর স্থানীয় বাঙ্গালিরা একটি মিছিল বের করে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় “ইউপিডিএফের (মূল) কিছু সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০টি গুলি ছোড়ে।”
আইএসপিআর ভাষ্য মতে, এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করে।
আইএসপিআর তার বিবৃতিতে আরও জানায়, সেই রাতেই খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল রাত সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে।
গুলিতে ৩ পাহাড়ির মৃত্যু
আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে দাবী করা হয়, “ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা” সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। ওই গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।
পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে পাহাড়িদের আয়োজিত একটি প্রতিবাদ মিছিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনিক কুমার চাকমা নামে একজন কলেজ ছাত্র নিহত হন।
সহিংস এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দুই পার্বত্য জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, যা খাগড়াছড়িতে শুক্রবার রাত ৯ টার পর আর বাড়ানো হয়নি এবং রাঙ্গামাটিতে রবিবার বেলা ১১ টায় তুলে নেয়া হয়।
সহিংসতার ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ভাংচুর ও সহিংসতার ঘটনায় আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মোঃ মামুনের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার তিন জন আওয়ামী লিগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন, যারা ৫ই অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।