যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার রাজ্যে তার ব্যক্তিগত বাড়িতে ভারত, অস্ট্রেলিয়াও জাপানের নেতাদের তাঁর সভাপতিত্বে কোয়াডের চূড়ান্ত বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কোয়াড ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি কৌশলগত নিরাপত্তা গ্রুপ।
কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের শোনা বাইডেনের মন্তব্যই এই বিশেষ একান্ত বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয়কে আলোকিত করেছে এবং সেই বিষয়টি হলো চীন।
বাইডেন বলেন, তার প্রশাসন বেইজিং-এর শক্তি প্রদর্শন সহ সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে তাদের ‘পন্থার পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন, কৌশলের পরিবর্তন হিসেবে নয়।
বাইডেন অন্য তিন নেতাকে বলেন, “আমরা মনে করি, (চীনের প্রেসিডেন্ট) শি জিনপিং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের ওপর মনোনিবেশ করতে এবং চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের অস্থিরতা হ্রাস করতে চাইছেন এবং আমার মতে, তিনি চীনের স্বার্থকে আগ্রাসীভাবে অনুসরণ করার জন্য নিজে কিছুটা কূটনৈতিক সুবিধা করতে চাইছেন।”
তিনি আরও বলেন, “চীন আগ্রাসী আচরণ অব্যাহত রেখেছে; দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন, দক্ষিণ এশিয়া এবং তাইওয়ান প্রণালীসহ পুরো অঞ্চলজুড়ে তারা পরীক্ষা চালাচ্ছে।"
ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের দাবি করা অংশসহ দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে বেইজিং। জাপান ও তাইওয়ানের দাবী করা পূর্ব চীন সাগরের অঞ্চলগুলোও নিজেদের বলে দাবি করে তারা। তারা গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
চীন নিয়ে চিন্তা
প্রকাশ্যে, বাইডেনের বার্তাটি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং সহজ- “কোয়াড এখানে থাকার জন্য রয়েছে।”
বাইডেন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার দীর্ঘ যৌথ বিবৃতির শেষ বাক্য ছিল এই ছয়টি শব্দ।
তাদের বিবৃতিতে, চার দেশের নেতারা কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেন যেগুলো, তাদের মতে, নিজস্ব সীমান্তের বাইরে এই বিশাল অঞ্চলের উদ্বেগের বিষয়গুলো মোকাবেলা করতে এবং চার গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যা এবং বিশ্ব অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ রয়েছে এই ভারতীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।
যদিও তারা ‘চীন’ শব্দটি মাত্র তিনবার ব্যবহার করেন এবং তিনবারই দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে, তারা বেইজিং থেকে নিজেদের পার্থক্য পরিষ্কার করে দেন।
“আমরা স্থিতাবস্থা জোরপূর্বক পরিবর্তন করার বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার যেকোনো এক তরফা পদক্ষেপের বিরোধিতা করি। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে বেআইনি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নিন্দা করি,” বিবৃতিতে বলা হয়।
“আমরা সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্রপথে বিপজ্জনক এবং আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা এমন এক অঞ্চল চাই যেখানে কোন এক দেশের আধিপত্য নাই, এবং কোন দেশ চাপের মুখে নেই – যেখানে সকল দেশ চাপ থেকে মুক্ত এবং তারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে,” তারা বলেন।
চীন এর আগে কোয়াডকে একটি “এক্সক্লুসিভ ক্লাব” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে তারা “আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং আস্থার অবমূল্যায়ন করছে।”
ডেলাওয়ারের উইলমিংটন থেকে ভিওএ-র সিলিয়া মেন্দোজা এবং ওয়াশিংটন থেকে প্যারিস হুয়াং ও কিম লুইস এই রিপোর্টে অবদান রাখেন।