পশ্চিম তীরে আল জাজিরার দফতরে ইসরায়েলি বাহিনীর হানা, ৪৫ দিন বন্ধের নির্দেশ

আল জাজিরায় প্রচারিত লাইভ ফুটেজ থেকে নেয়া স্থির চিত্রে দেখা যাচ্ছে, একজন ইসরায়েলি সৈন্য নেটওয়ার্কের জেরুজালেম ও রামাল্লাহ ব্যুরো প্রধান ওয়ালিদ আল-ওমোরের সাথে কথা বলছে। ফটোঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রবিবার ভোরে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে থাকা আল জাজিরা সংবাদ নেটওয়ার্ক-এর দফতরে হানা দেয় এবং এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

এই আদেশ আসে কাতারের অর্থায়নে চলা এই সংবাদ সম্প্রচারকারী সংস্থাকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল ব্যাপক প্রচারণার মধ্যে, যখন আল জাজিরা গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তারা সংবাদ পরিবেশন করছে।

নেটওয়ার্কের দফতরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের দৃশ্য আল জাজিরা তাদের আরবি ভাষার চ্যানেলে লাইভ প্রচার করে, যেখানে তাদের ৪৫ দিন দফতর বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বছরের মে মাসে ইসরায়েলি পুলিশ পূর্ব জেরুজালেমে আল জাজিরার সম্প্রচার কেন্দ্রে হানা দিয়ে তাদের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। ইসরায়েলে এই সংস্থার সম্প্রচার বন্ধ করা হয় এবং তাদের ওয়েবসাইটগুলিকেও ব্লক করা হয়। মে মাসের পর আবার এই ঘটনা ঘটলো।

মে মাসে ইসরায়েল প্রথমবার তাদের দেশে কর্মরত বিদেশী সংবাদ সংস্থা বন্ধ করলো। তবে, আল জাজিরা ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে তাদের কাজ অব্যাহত রাখে। ফিলিস্তিনিরা এই দুই অঞ্চল নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠন করার আশা পোষণ করেন।

রামাল্লাহয় অবস্থিত কাতারি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরার অফিসে ইসরায়েলি বাহিনীর হানার মুহূর্তটি আল জাজিরার আরবি চ্যনেল লাইভ প্রচার করে। প্রচারিত লাইভ ফুটেজ থেকে নেয়া স্থির চিত্রে ইসরায়েলি সৈন্যদের ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জবাব দেয়নি। আল জাজিরা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে। তারা জর্ডনের আম্মান থেকে লাইভ সম্প্রচার বজায় রেখেছে।

লাইভ সম্প্রচার

সশস্ত্র ইসরায়েলি সৈন্যরা দফতরে প্রবেশ করে এবং এক সংবাদদাতাকে ‘লাইভ অন এয়ার’ বলে যে, দফতর বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং কর্মীদের অবিলম্বে দফতর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই সংবাদ সংস্থা পরে এক দৃশ্য সম্প্রচার করে যেখানে আল জাজিরার দফতর কর্তৃক ব্যবহৃত বারান্দায় রাখা একটি ব্যানার ইসরায়েলি সৈন্যদের ছিঁড়ে ফেলছে দেখা যায়। আল জাজিরা জানিয়েছে, এই ব্যানারে ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের ছবি ছিল যাকে ইসরায়েলি বাহিনী ২০২২ সালের মে মাসে গুলি করে হত্যা করে।

এক ইসরায়েলি সৈন্য আল জাজিরার স্থানীয় শাখার প্রধান ওয়ালিদ আল-ওমারিকে লাইভ ফুটেজে বলে, “আল জাজিরা ৪৫ দিন বন্ধ রাখার আদালতের নির্দেশ রয়েছে। সব ক্যামেরা নিয়ে এই মুহূর্তে দফতর ছাড়তে আপনাকে অনুরোধ করছি।”

আল-ওমারি বলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা এই ব্যুরোর নথি ও সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করে। এই এলাকায় কাঁদানে গ্যাস ও গুলির আওয়াজ দেখা ও শোনা যায়।

পরে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আল-ওমারি বলেন, তাদের দফতর বন্ধের নির্দেশকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনে আরোপিত ব্রিটিশ আমলের আইনের কথা উল্লেখ করেছে।

ফিলিস্তিনিরা ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির মাধ্যমে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে সীমিত স্ব-শাসনের অধিকার পায়। ইসরায়েল পশ্চিম তীরের বিশাল এলাকা দখল করে রেখেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করে।

রামাল্লাহ পুরোপুরি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত নিয়ন্ত্রণের অধীনে রয়েছে, যার ফলে, আল জাজিরার দফতরে ইসরায়েলি হানা অনেককে বিস্মিত করছে।