বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় দ্বিতীয় প্রধান কমান্ডার নিহত, বলছে হিজবুল্লাহ

বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের উপশহরগুলিতে মানুষ ইসরায়েলি হামলার ঘটনাস্থলে ক্ষতি পরীক্ষা করছে, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪৷

শনিবার হিজবুল্লাহ বলে, বৈরুতের শক্তিশালী ঘাঁটিতে এর আগের দিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১৬ জন যোদ্ধার মধ্যে একজন দ্বিতীয় সিনিয়র কমান্ডার ছিলেন। এ হামলা তাদের সামরিক নেতৃত্বের উপর আঘাতের ব্যাপকতা তুলে ধরে।

ইসরায়েল বলে, শুক্রবার লেবাননের রাজধানীর দক্ষিণ উপশহরে হামলায় হিজবুল্লাহর শ্রেষ্ঠ বাহিনী রাদওয়ান ফোর্সের প্রধান ইব্রাহিম আকিল এবং আরও কয়েকজন কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

এই সপ্তাহে যোগাযোগ মাধ্যমের যন্ত্রে নাশকতামূলক হামলায় হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে ৩৭ জন মানুষ নিহত হয়েছে। তার উপর এই হামলায় ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং তাদের যোদ্ধাদের মনোবলের উপর প্রচন্ড আঘাত হানে।

হিজবুল্লাহ তাদের দ্বিতীয় কমান্ডার আহমেদ মাহমুদ ওয়াহবি-এর নাম প্রকাশ করেছে। তারা বলে, তিনি অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে এই বছরের শুরু পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের গোষ্ঠীর অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

১৯৮৩ সালে বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলায় জড়িত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চিহ্নিত আকিলের মৃত্যুর বিষয়টি হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করে। হিজবুল্লাহ তাকে "তাদের মহান নেতাদের একজন" বলে প্রশংসা করে।

এএফপি সাংবাদিকরা জানান, শুক্রবারের হামলার ফলে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে এবং একটি উঁচু ভবনের নিচের তলাগুলো আগুনে পুড়ে গেছে।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এটি ছিল হিজবুল্লাহর সামরিক নেতৃত্বের ওপর দ্বিতীয় ইসরায়েলি হামলা। জুলাই মাসে বৈরুতে একটি ইসরায়েলি হামলায় আন্দোলনটির শীর্ষ অপারেশন প্রধান ফুয়াদ শুকুর নিহত হন।

এ হামলাটি মঙ্গলবার ও বুধবার হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত পেজার এবং দ্বিমুখী রেডিওতে নাশকতামূলক হামলার ঠিক পরে করা হয়। আগের দুইটি হামলায় ৩৭ জন নিহত হয় এবং এতে একটি বড় রকমের যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। ।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে, তারা আকিলের বিরুদ্ধে একটি "টার্গেটেড হামলা" পরিচালনা করে। হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলে, এ হামলায় রাদওয়ান ফোর্সের মোট ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছে।

সূত্রটি বলে, আকিল নিহত হওয়ার সময় "কমান্ডারদের সাথে একটি বৈঠকে" ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র আকিল সম্পর্কে তথ্যের জন্য ৭০ লক্ষ ডলার পুরস্কারের প্রস্তাব করেছিল। তারা তাকে একটি সংস্থার "প্রধান সদস্য" হিসাবে বর্ণনা করে। সংস্থাটি ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলার দাবি করে, যাতে ৬৩ জন নিহত হন।

সুত্রপাত

৭ অক্টোবরের হামলার মাধ্যমে হামাস বিদ্রোহীরা গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা এবং হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করেছে।

প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলের অস্ত্রশক্তির লক্ষ্যস্থল ছিল গাজা। কিন্তু হামাস অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ায় সেই মনোযোগ এখন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তের উপর এসেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ইসরায়েলের "শত্রুরা" কোনো আশ্রয় পাবে না, এমনকি বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরগুলিতেও নয়।

ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি হামলার পর বলেন ইসরায়েলের " লক্ষ্য এ অঞ্চলে একটি ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করা নয়।"

তবে হামাস এ হামলাকে "নৃশংস ও সন্ত্রাসী আগ্রাসন" এবং "উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা " বলে অভিহিত করে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে "যুদ্ধের পরিসর প্রসারিত করার" চেষ্টা করার জন্য অভিযুক্ত করে।

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বৃহস্পতিবার অঙ্গীকার করেন ইসরাইলের উপর এই বিস্ফোরণ হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।