বাংলাদেশে সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে ডঃ ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটরদের চিঠি

ফাইল ফটোঃ ক্যাপটল ভবন, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটি।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ার সেনেটর বেন কার্ডিন এবং সদস্য সেনেটর ক্রিস মারফি, সেনেটর ভ্যান হলেন ও সেনেটর জেফ মার্কলি যৌথভাবে এই চিঠি দেন।

চিঠিতে আইনপ্রণেতারা বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের দাবিতে যে ব্যাপক গণ আন্দোলন হয়েছে তার প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর গুরুত্ব দেন।

সেইসাথে সেনেটররা দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ 'দুর্বল' সম্প্রদায়ের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া ও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে জুলাই মাসের এক তারিখে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভে পরিণত হয়। জাতিসংঘের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে প্রায় ৪০০ জন নিহত হয়েছে।

শেখ হাসিনা ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে এই গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সেদিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ অগাস্ট বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ অগাস্ট বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ৮ অগাস্ট, ২০২৪।

সেনেটররা তাদের চিঠিতে এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে উল্লেখ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তারা আরও বলেন এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং সরকার পরিচালনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একটি 'ঐতিহাসিক সুযোগ' সৃষ্টি হয়েছে।

তবে এই নতুন অধ্যায় উদযাপনের সময়টাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সহিংসতার ব্যাপারে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যেখানে পুলিশ, সংখ্যালঘু হিন্দু এবং যাদেরকে শেখ হাসিনার সরকারের সমর্থক বলে ধরে নেয়া হয় তাদেরকে সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশজুড়ে পুলিশ, সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উপর হামলা হয়।

জাতিসংঘের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে ১১ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ২৫০ জনের অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, বাংলাদেশে ৪ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ১২ আগস্ট বলেছিলেন, দেশের ২০ জেলায় ৩০ টি সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা সংক্রান্ত ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত ছিল বলে ১৬ অগাস্ট এক ফোনালাপে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী দিল্লির লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১৫ অগাস্ট, ২০২৪।

বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশটি যাতে তার জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনে একটি সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের দিকে সফল ভাবে এগিয়ে যায় তার জন্য তাদের চিঠিতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রনেতারা।

এর আগে এই বছরের ৬ অগাস্ট, হাসিনা সরকারের পতনের পর ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ার সেনেটর বেন কার্ডিন এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার গঠন করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজনের আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, "আমি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে একটি দায়িত্বশীল তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাই যা অবিলম্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করবে।"

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এখনও কিছু জানায়নি।