অন্তবর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ''বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন করেছে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে রপ্তানির সময় গুণগতমান দেখা।''
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) একথা বলেন।
এর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ১১ আগস্ট সচিবালয়ে তার প্রথম কর্মদিবসে বিদেশে ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না, বিদেশে রপ্তানি হবে, এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর রপ্তানির চিন্তা।"
মন্ত্রণালয়ের নাম 'ইলিশ মন্ত্রণালয়' হলেও তিনি আপত্তি করতেন না উল্লেখ করে সেদিন উপদেষ্টা আরও বলেন, "কারণ ইলিশ একটা বিশেষ মাছ। যেটা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়। দেশের মানুষকে না খাইয়ে ইলিশ বাইরে পাঠানো আমি কোনোমতেই অনুমোদন করি না।"
শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তারের সই করা এক আদেশে এ রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য জানানো হয়।
আদেশে জানানো হয়, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত শর্তাবলীপূরণ সাপেক্ষে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।
পরিমাণ প্রসঙ্গে শনিবার ভয়েস অফ আমেরিকাকে এই উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে সরবরাহের উপর নির্ভর করবে কতটা রপ্তানি করা যাবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই ২০২৩- জুন ২০২৪) বাংলাদেশ ভারতে ৬৬৪ দশমিক ৮৬ টন ইলিশ রপ্তানি করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই ২০২২- জুন ২০২৩) এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪২ টন।
রপ্তানির কারণে বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ফরিদা আখতার বলেন, ''এমনিতে এবার ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। মাছ ধরাও কম হয়েছে। আবার যা ধরা হয়েছে তা নানা পথে চলে যাচ্ছে। যার ফলে, দেশের বাজারে এখন কেমন প্রভাব পড়ে তা দেখার বিষয়।''
ওদিকে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা বলছেন ঢাকার বাজারে ইলিশ এখন বেশ চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের মাছের ব্যবসায়ী সোহাগ জানান, "এক কেজি সাইজের ইলিশ ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর দেড় কেজি সাইজের ২ হাজার ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।"
সোহাগও জানালেন এখনও বাজারে চাহিদার তুলনায় ইলিশ মাছের সরবরাহ কম।
সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে ইলিশের ভরা মৌসুমেও দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বড় স্টেশন মাছ ঘাট) সরবরাহ বাড়তে দেখা যায়নি।।
যার ফলে আড়তে ও স্থানীয় মাছ বাজারে পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বৈধ রপ্তানির পাশাপাশি চরাচালানির মাধ্যমেও বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ইলিশ যায়।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৮৮৫ কেজি ইলিশ জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পহেলা বৈশাখ ও পূজার সময় বাংলাদেশে ইলিশ মাছের চাহিদা বেশি থাকে।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।)