সুনামগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলা ও গুলির ঘটনায় করা মামলায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানকে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় আদালতের মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সুনামগঞ্জ কোর্টের ওসি সৈয়দ ইফতেকার আলম জানান, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু ও আজাদুল ইসলামের নেতৃত্বে আদালতে এম.এ মান্নানের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে নির্ধারিত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে না থাকায় জামিনের আবেদন শুনানি না হওয়ায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের হিজলকরচ নামক বাসভবন থেকে এম.এ মান্নানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয় পুলিশ জানান, গ্রেফতারের পর রাতেই তাকে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় রাখা হয়। শুক্রবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর দ্রুত বিচার আইনে সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট নির্জন কুমার মিত্র’র আদালতে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নানসহ সুনামগঞ্জের সাবেক চার সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি- সম্পাদকসহ মোট ৯৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের মো.হাফিজ আহমদ।
মামলায় এজহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাস স্টেশনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সসস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাদীর ভাই জহুর আলী ও রিপন মিয়াকে গুলি করে, রামদা দিয়ে কুপিয়ে, পেট্টোল বোমা ও ককটেল ফাটিয়ে বিনা উসকানিতে গুরুতর আহত করেছেন। আসামিদের কেউ সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। আবার কেউ হুকুম দিয়েছেন।
মামলা বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুক আলম ও আব্দুল হক দাবি করেন, গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জে মিছিল করার সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে আক্রমণ করা হয়েছে। এসময় পুলিশও হামলা করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত ওই মামলাটি সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে এফআইআর করা হয়।
সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর স্ত্রী জুলেখা মান্নান দাবি করেন, এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। যেই এলাকার হামলার কথা এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে তা এম এ মান্নানের নির্বাচনী এলাকা নয়। তিনি বলেন, "ঐ এলাকায় অন্য একজন এমপি রয়েছেন।"
এম এ মান্নান সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে আওয়ামী লীগের প্রাক্তন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা-কর্মী এবং সাংবাদিক, সাহিত্যিক সহ শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই খুন সংক্রান্ত।
ব্যাপক হারে খুনের মামলা এবং তার ভিত্তিতে গ্রেফতার এবং পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করা নিয়ে আইনজীবী এবং সাংবাদিক মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ময়নুল ইসলাম ১৬ সেপ্টেম্বর আশ্বাস দেন যে প্রমাণ ছাড়া কাওকে গ্রেফতার করা হবে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, "আজ পর্যন্ত কিন্তু পুলিশ (মামলা) দিচ্ছে না। এটা কিন্তু সাধারণ পাবলিকরা দিচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি, তদন্ত ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা হবে না। ধরার কথা অপরাধীদের, আমি সাধারণ মানুষকে তো ধরার জন্য বলবো না।"
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের অনেকেই গ্রেপ্তার ও শারীরিক হামলার আশঙ্কায় পালিয়ে যান বা গা-ঢাকা দেন।
গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত এম এ মান্নান সুনামগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন এবং সেখানকার স্কুলে নিয়মিত ইংরেজির ক্লাস নিয়েছেন বলে জানান তার স্ত্রী।
তার স্ত্রী বলেন, "তিনি তো পালিয়ে যাননি, তার এলাকার মানুষদের মাঝেই ছিলেন।"
তার বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি উল্লেখ করে জুলেখা মান্নান জানান বার্ধক্যজনিত অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি তার এরই মধ্যে একাধিকবার কোভিড ও নিউমোনিয়া হয়েছে এবং তাকে নিয়মিত অক্সিজেন নিতে হয়।
তিনি দাবী করেন, এ অবস্থায় 'ভিত্তিহীন' অভিযোগে জেলহাজতে প্রেরণ করে তাকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
এম এ মান্নান ২০১৯-২০২৪ মেয়াদে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।