মাহসা আমিনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী এবং এ ঘটনাটি যে গণবিক্ষোভের সূত্রপাত করে, সেই সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ইরানের শহরগুলির রাস্তায় বাধ্যতামূলক হিজাব ছাড়াই একজন নারীকে রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার বিষয়টি আরও সাধারণ হয়ে উঠছে।
কোন সরকারী কর্মকর্তা বা গবেষণা এ ধরণের ঘটনা স্বীকার করেনি। ইরানে গ্রীষ্মের গরম মাস শুরুর সাথে সাথে এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় এই ধরণের ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে মানুষ তাদের আশেপাশের রাস্তায় বা তাদের জীবনের সাধারণ একটি দিন সম্পর্কে কথা বলার ভিডিওগুলোতে, বিশেষত সূর্যাস্তের পরে নারী এবং মেয়েদের তাদের কাঁধের উপর লম্বা চুল খুলে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।
এই ধরণের প্রতিবাদগুলো সত্বেও ইরানের ধর্মতন্ত্র বিক্ষোভকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করছে। এই শাস্তির ধরণকে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা "সম্প্রসারিত দমনমূলক পদক্ষেপ এবং নীতি" হিসাবে বর্ণনা করে। যদিও এই বিক্ষোভকারীদের জাগিয়ে তোলার জন্য আমিনির মৃত্যুর মতো সম্প্রতি কোনো অনুঘটক ঘটনা ঘটেনি।
দেশটির নতুন সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক নারীদের হয়রানি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিতে প্রচারণা চালান। কিন্তু, দেশটির চূড়ান্ত কর্তৃত্বে রয়েছেন ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি অতীতে বলেছিলেন "নারীদের হিজাব খোলা রাখা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ।"
কিছু মুসলিম নারীদের জন্য মাথা ঢেকে রাখা আল্লাহর সামনে ধার্মিকতার এবং তাদের পরিবারের বাইরে পুরুষদের সামনে শালীনতা মেনে চলার একটি চিহ্ন। ইরানে হিজাব এবং কিছু মানুষ সম্পূর্ণ দেহ আবৃতকারী কালো চাদর পড়া দীর্ঘকাল ধরে একটি রাজনৈতিক প্রতীকও ছিল৷
২২ বছর বয়সী আমিনি ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুসারে হিজাব না পরার কারণে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর, তিনি একটি হাসপাতালে মারা যান। আমিনির মৃত্যুর পরে যে প্রতিবাদ শুরু হয়, তা প্রথমে "নারী, জীবন, স্বাধীনতা" স্লোগান দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু, বিক্ষোভকারীদের ডাক শীঘ্রই খামেনির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রকাশ্য আহ্বানে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে, নিরাপত্তার জন্য মাসব্যাপী একটি দমন অভিযানে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ২২,০০০ জনকে আটক করা হয়।
এই বিক্ষোভগুলো সাথে অনেক ঝুঁকিও নিয়ে আসে। বিক্ষোভ থামার কয়েক মাস পর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আবার রাস্তায় ফিরে এসেছে।
সেই সময় থেকে পুলিশদের দ্বারা নারী ও অল্পবয়সী মেয়েদের মারধর করার বিক্ষিপ্ত ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। ২০২৩ সালে তেহরানের মেট্রোতে একজন ইরানী কিশোরী রহস্যজনকভাবে আহত হয়। মেয়েটি সে সময় হিজাব পরে ছিল না এবং পরে সে হাসপাতালে মারা যায়। জুলাই মাসে, সমাজকর্মীরা বলেন, হিজাব না পরার কারণে এক নারী তার গাড়ি আটক করা এড়াতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকি থেকে পালিয়ে আসার সময় তার উপর গুলি চালানো হয়।
ইতোমধ্যে, সরকার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে যেখানে নারীদের হিজাব ছাড়াই দেখা যায়। নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে নারীদের খুঁজে বের করা হয় যারা গাড়ির মধ্যে তাদের মাথা অনাবৃত রাখে এবং তাদেরকে জরিমানা এবং গাড়ি জব্দ করা হয়। জাতিসংঘ বলে, দেশটির সরকার ২০২৪ সালের তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং কিশ দ্বীপে মাথা অনাবৃত রাখা নারীদের পর্যবেক্ষণের জন্য এরিয়াল ড্রোন ব্যবহার করার মতন ঘটনাও ঘটিয়েছে।
তবুও কেউ কেউ মনে করেন মে মাসে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর, জুলাই মাসে পেজেশকিয়ানের নির্বাচনের মাধ্যমে হিজাব নিয়ে চাপ কমে এসেছে।
যদিও সরকার হিজাব না পরা নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সরাসরি কোনও কথা বলছে না, রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাওয়ার আরও লক্ষণ রয়েছে। আগস্টে, কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বক্তব্য দেওয়ার একদিন পরে আমিনীকে "অশুভ" বলার কারণে বরখাস্ত করা হয়।