শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার ইউক্রেন ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন।
বাইডেন স্টারমারকে বলেন, “ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের পাশেই আছে। স্পষ্টত, এই যুদ্ধে পুতিন টিকে থাকতে পারবেন না।“
এমন সময় এই বৈঠক হলো যখন পশ্চিমা মিত্ররা তাদের নীতিমালা বদলে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দেওয়া দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে রুশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গত সপ্তাহে কিয়েভে গিয়েছিলেন। সে সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এ ধরনের অস্ত্র প্রয়োগের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তার কাছে থাকা অস্ত্রের মধ্যে আছে আমেরিকান এটিএসিএমএস (আর্মি ট্যাকটিকাল মিসাইল সিস্টেম) ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল, যার মাধ্যমে তিনি রাশিয়া অভিমুখে হামলা চালাতে আগ্রহী।
এ সপ্তাহের শুরুতে, বাইডেন ইঙ্গিত দেন, তিনি বিধিনিষেধ আরও শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এক সাংবাদিককে তিনি বলেন, তার প্রশাসন “এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে”।
কিয়েভকে দূর-পাল্লার অস্ত্র দেওয়া হলে চলমান সংঘাত ইউক্রেনের গণ্ডি ছাড়াবে বলে সতর্ক করেছে মস্কো। বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, দূর-পাল্লার অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর “অর্থ হলো, নেটো দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। আর বিষয়টি যদি এমন হয়, তাহলে এই সংঘাতের পরিবর্তিত সূরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের প্রতি যেসব হুমকি তৈরি হবে, সে অনুযায়ী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের স্টারমার বলেন, তিনি ও বাইডেন “একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছেন”, কিন্তু ইউক্রেনকে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
তিনি বলেন, “একটি সুনির্দিষ্ট সক্ষমতা নিয়ে আলোচনার জন্য এই বৈঠকের আয়োজন হয়নি। এটার জন্য আমরা একত্র হইনি আজ”, ।এর উদ্দেশ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট স্থানে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে একত্র হয়ে কৌশলগত আলোচনা করা, যাতে বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায়।”
দুই নেতা গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান ১১ মাসের যুদ্ধে বিরতির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রসঙ্গে সাধারণত ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুর মেলায় লন্ডন। তবে গত সপ্তাহে স্টারমারের সরকার গাজায় সামরিক অভিযানে ব্যবহারের জন্য ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি করার কিছু লাইসেন্স স্থগিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের কার্যক্রমে নিরীক্ষা চালিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় লন্ডন।
গাজায় চলমান সংঘাতে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহের ৩০টি লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসরায়েলে রপ্তানির জন্য প্রায় ৩৫০টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ অস্ত্র কারখানাগুলোতে বেশ কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলার পর স্থগিতের ঘোষণা এলো।
জুলাই মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটা বাইডেনের সঙ্গে স্টারমারের দ্বিতীয় সরাসরি সাক্ষাত।
স্টারমার বলেন, “আমার মতে, ঐতিহাসিকভাবে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তিমত্তা আর আমরা যে কৌশলগত দিক দিয়ে একই সঙ্গে আছি , তা প্রদর্শন করেছি। বৈশ্বিক বিষয়গুলোতে আমাদের স্বার্থ অভিন্ন।”
ইউরোপে ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, বিশেষত, যদি নভেম্বরের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করতে পারেন। অনেকেই উদ্বিগ্ন, নেটোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশকারী ট্রাম্পের শাসনামলে—ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমে যেতে পারে।