অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুবাস শহরে ইসরায়েলি আক্রমণে নিহত ৫ জনের শেষ কৃত্যানুষ্ঠানে শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন শত শত শোকার্ত মানুষ। এ দিকে মাদ্রিদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়ে স্পেন একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করে।
শুক্রবার শোকার্ত লোকজন তুবাসের রাস্তা দিয়ে কাঁধে করে নিহতদের মধ্যে চার জনের মরদেহ স্ট্রেচারে করে নিয়ে যায়। অনেককে সবুজ রঙের হামাসের পতাকা বহন করতে দেখা যায়। নিহত পঞ্চম ব্যক্তিটিকে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে তামুনে সমাহিত করা হয়।
এক বিবৃতিতে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে বুধবার ইসরায়েলি বিমান, “ বিস্ফোরক বহনকারী ৫ জন সন্ত্রাসী, যারা ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতি হুমকি স্বরুপ ছিল তাদের উপর আঘাত হেনে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়”।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতদের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি যে ইসরায়েলি আক্রমণে নিহতরা কি জঙ্গি ছিল না কি অসামরিক লোক ছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী গত দু সপ্তাহ ধরে পশ্চমি তীরের উত্তরাঞ্চলে একাধিক তত্পরতা চালিয়েছে এবং বিশেষত জেনিন, তুবাস ও তুলকার্মে বর্ধিত আক্রমণ চালায়। এই তিনটি শহরের সব ক’টি তে হামাস, ইরান সমর্থিত ইসলামিক জিহাদ ও ফাতাহ’র সশস্ত্র অংশের বিপুল উপস্থিতি রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ে সমন্বয় সাধন বিষয়ক দপ্তর বা ওসিএইচএ শুক্রবার জানায় যে এ সপ্তাহ জুড়ে গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি বিমান ও স্থলবাহিনী দিয়ে আক্রমণ অব্যাহত ছিল যার ফলে অসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়া, স্থানচ্যূত হওয়া এবং ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অসামরিক অবকাঠামোর বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায় বিশেষত বেইত হানুন, খান ইউনিস, দেইর আল বালাহ এবং রাফাহতে প্রচন্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে আর তার পাশাপাশি ইসরায়েলের উপর ফিলিস্তিনিরা রকেটও নিক্ষেপ করেছে।
এ দিকে শুক্রবার গাজার পরিস্থিতি ও একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনার জন্য স্পেনের সরকার ইউরোপীয় ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলির একটি বৈঠকের আয়োজন করে।
উদ্বোধনী মন্তব্যে স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, “ অঞ্চলটিতে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সহাবস্থান”।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজের সঙ্গে আলবারেস আয়োজিত এই বৈঠকে আমন্ত্রিত হন আরব-ইসলামিক কন্টাক্ট গ্রুপের সদস্য রাষ্ট্রগুলি যাদের মধ্যে রয়েছে মিশর, সৌদি আরব, কাতার, জর্দান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া ও তুরস্ক।
তাছাড়া এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বরেল এবং নরওয়ে ও স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও আয়ইয়ারল্যান্ডের জাতিসংঘ নীতি বিষয়ক পরিচালক।
আলবারেস বলেন এই বৈঠকে ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব ছিল না কারণ ইসরায়েল এই কন্টাক্ট গ্রুপের অংশ নয়। তবে তিনি বলেন তারা ইসরায়েলকে এ ধরণের যে কোন সমাবেশে যুক্ত করতে “ আনন্দিত বোধ করবেন যেখানে শান্তি এবং দু’টি রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে”।
ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা বা ইউএনআরডব্লিউিএ এক বিবৃতিতে শুক্রবার বলে যে তাদের সংস্থার একজন পয়ঃনিষ্কাশন কর্মী, সুফিয়া জাবেরকে বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সময়ে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে আল ফাারা শিবিরে তার নিজের বাড়ির ছাদে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে গত ১০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথমবার পশ্চিম তীরে ইউএনআরডব্লিউিএ ‘এর একজন কর্মীকে হত্যা করা হয়।
শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউিএ আরও জানায় যে জাতিসংঘের দেওয়া পোলিও টিকার প্রথম দফা সমাপ্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার এবং তারা ৯০% মানুষকে এই টিকা দিতে পেরেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাস জানান যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৫,৬০,০০০ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলায় ১২০০ লোককে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েল বলছে তারা মনে করে এখনও হামাস ১০১ জন পণবন্দিকে আটকে রেখেছে যার মধ্যে ৩৫ জন মারা গেছেন বলে সামরিক বাহিনী বলছে।
ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজায় ৪১,০০০ ‘এর ও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে। তারা অবশ্য গণনার সময়ে যুদ্ধরত মানুষ এবং অসামরিক লোকের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলি হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবেই অভিহিত করে।
গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ লক্ষ লোক বাস্তুচ্যূত আর গোটা জনসংখ্যাই দূর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জাতিসংঘ মনে করে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, রয়টার্স ও এএফপি থেকে নেওয়া হয়েছে।