ভারী বর্ষণের কারণে তিন দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীগুলোর পানির স্তর বাড়তে পারে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে গোমতী নদীর পানির স্তর কমলেও বাড়ছে ফেনী, মুহুরী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানিও আস্তে আস্তে কমছে। এ সব নদীতে ৫ দিন ধরে পানি কমতে থাকলে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।
অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির স্তরও নামছে। আগামী দুই দিন পানির স্তর স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তবে বিপৎসীমার নিচেই থাকবে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও ধীর গতিতে কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব নদ-নদীর পানির স্তর কমে যাওয়াও সম্ভাবনা রয়েছে।
সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সিলেট বিভাগের অন্য প্রধান নদী মনু, সারিগাইন, ধলাই, খোয়াই ইত্যাদি পানি কমে যাচ্ছে।
আগামী দুই দিনে সিলেট বিভাগের নদ-নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশে ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আগামী তিন দিনে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।
খুলনায় কপোতাক্ষ নদের বাঁধে ভাঙন, পাইকগাছার বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা
এদিকে খুলনার পাইকগাছার কপোতাক্ষের বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কপোতাক্ষ পাড়ের হাচিমপুর আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দারা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খননকৃত মরিচ্চাপ নদীর বাঁধ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভেঙে গেলে ওই নদীর পানির চাপ পড়ে পাইকগাছার চাঁদখালী ইউনিয়নের হাচিমপুর আশ্রয়নকেন্দ্র সংলগ্ন খননকৃত কপোতাক্ষ নদের বাঁধে।
টানা ৩ দিনের পানির আঘাতে বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বাঁধের ২০০ ফুট এলাকা ভেঙে নদীতে মিশে গেছে এবং একাধিক স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ভাঙন রোধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানায় স্থানীয়রা।
দেবদুয়ার গ্রামের তোরাব হোসেন খান বলেন, মরিচ্চাপ নদীর পানির চাপের কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
হাচিমপুর আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা বেবী বেগম বলেন, বাঁধ ভেঙে গেলে সর্বপ্রথমে আমরা আবাসনের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা ৬০ পরিবার বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছি।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাচিমপুর, দেবদুয়ার, শাহপাড়াসহ চাঁদখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুটি ইটভাটা, আবাসন ও কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
দেবদুয়ার গ্রামের আমিনুর রহমান বলেন, জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, যেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে এটি মূল বেড়িবাঁধ নয়। এরপরও এলাকার ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ভাঙনের বিষয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সাতক্ষীরা জেলা ও আশাশুনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।