পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্দুকধারীরা বুধবার পোলিও বিরোধী একজন কর্মী ও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। পক্ষাঘাত ঘটানো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জাতীয় টিকাদান অভিযান চালানোর চেষ্টা করা স্বাস্থ্যসেবা দলের ওপর এটি দ্বিতীয় হামলা।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বাজাউর জেলায় শিশুদের টিকাদানকারী একটি পোলিও দলকে লক্ষ্য করে হামলাকারীরা হামলা চালায়। হামলায় একজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের জঙ্গি কবলিত জেলায় ভয়াবহ এই হামলার দায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী দাবী করেনি।
সোমবার প্রদেশটির দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলায় পোলিও টিকাদান দলের ওপর রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওই হামলায় তিনজন টিকাদানকারী ও ছয়জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
ইসলামিক স্টেট-খোরাসান নামে পরিচিত আফগানিস্তান-ভিত্তিক ইসলামিক স্টেটের একটি শাখা এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের দায় দাবী করেছে বলে জানা গেছে।
সহিংসতা কবলিত জেলাগুলোতে জঙ্গিরা প্রায়ই পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে পোলিও টিকাদানকারীদের লক্ষ্যবস্তু করে। বিগত বছরগুলোতে এ ধরনের হামলায় কয়েক ডজন টিকাদানকারী ও পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, যা পোলিও নির্মূল প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে আফগান সীমান্তের কাছাকাছি বা তদসংলগ্ন এলাকায়।
পোলিও ভাইরাসের ‘তীব্র প্রাদুর্ভাব'
সোমবার পাকিস্তান পোলিও নির্মূল কর্মসূচি জানায়, প্রায় ২৪ কোটি মানুষের দেশটি এ বছর পোলিও ভাইরাসের ‘তীব্র প্রাদুর্ভাবের’ মুখোমুখি হচ্ছে, দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৭ শিশু পঙ্গু হয়ে পড়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৬৬টি জেলায় নর্দমার নমুনা পরীক্ষায় অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা আরও শিশুদের হুমকির মুখে ফেলেছে।
কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়, চলমান ঘরে ঘরে প্রচারণার লক্ষ্য, দেশব্যাপী ১১৫টি জেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি শিশুকে টিকা দেয়া।
এখন পর্যন্ত ২০২৪ সালে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নয়টি পক্ষাঘাতগ্রস্ত পোলিও কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পোলিও বিদ্যমান আছে এমন মাত্র এই দুটি দেশ অবশিষ্ট আছে।
প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার অভিন্ন সীমান্তের উভয় দেশে পোলিও টিকাদান অভিযান দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এবং ভ্যাকসিন বয়কটের মত একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এতে বিশ্ব থেকে ভাইরাস নির্মূল করার লক্ষ্য পিছিয়ে পড়েছে।