ফাতিমা তাসনিমঃ নাহিদ ইসলামের 'বোন' হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন 'পরিস্থিতির স্বার্থে'

নাহিদ ইসলাম ও ফাতিমা তাসনিম।

নাহিদ ইসলাম তার ভাই নন, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে জুলাই মাসে নিজেকে তার বোন হিসাবে বিশ্ব গণমাধ্যমে পরিচয় দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ফাতিমা তাসনিম।

ফাতিমা তাসনিম নামের একজন নারী কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চাকরি পেয়েছেন বলে একটি অনলাইন পোর্টালে খবর প্রকাশিত হলে, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বোন হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন এমন গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে তাসনিম গুজবটি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, বিদেশে চাকরী নয়, তিনি পটুয়াখালী থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ফাতিমা তাসনিমের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নেই, তবে "বিশ্ববিদ্যালয়ের বোন হিসেবে তিনি আমাদের অনেক হেল্প করেছিলেন।"

কোন রক্তের সম্পর্ক নেই

উপদেষ্টা নাহিদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতিমা তাসনিম তার সঙ্গে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের একান্ত সহকারী মুনতাসির মাহমুদও বিষয়টি ভয়েস অফ আমেরিকাকে নিশ্চিত করেছেন। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “ফাতিমা তাসনিম নামে স্যারের (নাহিদ ইসলামের) কোনো বোন নেই। শুধু তাই নয়, স্যারের কোনো বোন নেই।” সেই সাথে তিনি জানান নাহিদ ইসলামের একটি ভাই আছে।

তবে ফাতিমা তাসনিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, তিনি যখন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ছিলেন তখন নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা ছিলেন ।

দীর্ঘদিন তারা একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন জানিয়ে তাসনিম বলেন, "তখন আমাদের মধ্যে ভাই-বোনের একটা সম্পর্ক হয়। সে আমাকে বোন হিসেবে শ্রদ্ধা করে, আমি তাকে ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করি।"

তিনি আরও বলেন, “২১ জুলাই গুম থেকে নাহিদ ফিরে আসার পর তার সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না হলে তার প্রাণের শঙ্কা ছিল। তখন আমি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ছিলাম (যেখান থেকে নাহিদকে তুলে নেয় ডিবি পুলিশ)। দেশের ওই সময়কার পরিস্থিতিতে হাসপাতাল রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া ভর্তি নিচ্ছিলো না।

"কিন্তু আমি যেহেতু প্রয়াত ডা.জাফরুল্লাহ স্যারের (গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ট্রাস্টি ছিলেন) সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, সেই হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে নার্সরা আমাকে চিনতেন। তাই আমি নাহিদের লিগ্যাল গার্ডিয়ান বোন পরিচয় দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন সঙ্গে তার স্ত্রী থাকলেও তিনি কিছুটা অসুস্থ ও আতঙ্কে ছিলেন। তাছাড়া আমি তার বোন পরিচয় না দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নিতে চাচ্ছিলো না,” তাসনিম বলেন।

গণমাধ্যমে বোন হিসাবে পরিচয়

এ বছরের ২৬ জুলাই সরকার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ডিবি পুলিশ নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে তাদের হেফাজতে নেয়।

সেই সময় ফাতিমা তাসনিম নিজেকে নাহিদ ইসলামের বোন পরিচয় দিয়ে আল-জাজিরা, এএফপিসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় গণমাধ্যমে কথা বলেন।

ফাতিমা তাসনিম বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছে, তাকে (নাহিদকে) একবার তুলে নিয়ে নির্যাতন করে ছেড়ে দিয়েছে, এবার মনে হয় মেরে ফেলবে। এই অবস্থায় নিউজটি যদি গণমাধ্যমে না জানাই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।

"তখন তো দেশে একটা যুদ্ধ চলছিল, সেই যুদ্ধের যোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে। কারণ আমি চেয়েছে তারা বেঁচে থাকুক, তারা বেঁচে থাকলে আন্দোলনটা বেঁচে থাকবে। সেই অবস্থায় কি পরিচয়ে আমার বক্তব্য গিয়েছে সেটা মূখ্য বিষয় ছিল না," তিনি বলেন।

তাসনিম বলেন যে, নাহিদ ইসলামকে যখন হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন শুধু তার স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো গণমাধ্যমে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না, "ওর (নাহিদ ইসলামের) ওয়াইফ পর্দা করে, ওর ওয়াইফের কোথাও কোন ছবি দেখবেন না, কোন সাক্ষাৎকার দেখবেন না।" যার কারণে তাকেই কথা বলতে হয়েছে বলে জানান ফাতিমা তাসনিম।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ফাতিমা তাসনিমের প্রসঙ্গে বলেছেন, "কেউ যদি আমার বোন পরিচয় দেয়, এটা প্রতিবাদ জানানোর বিষয় না। যদি এটা কোনো ইস্যু না হয়।"

তিনি বলেন, "আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম, তখন একটা ক্রুশিয়াল মুহূর্তে আমরা ছিলাম। উনি (ফাতিমা তাসনিম) আমাদের তখন হেল্প করেছিলেন। আমি যতটা জানি উনি গণঅধিকার পরিষদের নেত্রী ছিলেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোন হিসেবে তিনি তখন আমাদের অনেক হেল্প করেছিলেন।...আমরা তখন নজর রাখার সময় পাইনি, খেয়াল করারও সময় পাইনি।...উনার সাথে আগেও যোগাযোগ ছিল না, এরপর এত ব্যস্ততার মাঝে এখনো যোগাযোগ হয়ে উঠেনি।"

হাইকমিশনে চাকরি

‘অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বোন ফাতিমা তাসনিম কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চাকরি পেয়েছেন’ এমন একটি খবর ১০ সেপ্টেম্বর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় ওঠে।

এ বিষয়ে চাকরি পাওয়ার খবর সত্য নয় দাবি করে ফাতিমা তাসনিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমাকে হেনস্তা করার জন্য এটা করে থাকতে বলে আমি মনে করি।”

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চাকরি বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এই নামে (ফাতিমা তাসনিম) কাউকে কানাডায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। তাছাড়া কোথায় কী হচ্ছে, তা বিস্তারিত খোঁজ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

তিনি আরও বলেন, “কোথায় কোন স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, এটা তো লোকাল বিষয়। এটা কি উপদেষ্টার জানার কথা নাকি। সত্য কথা বলতে এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”