রাশিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের অভিযোগ

লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেন মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাশিয়াকে স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ইরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করেছে। তারা বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে ব্যবহার করা হবে এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন লন্ডন সফরের সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, এ’ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করলে সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে যে হুঁশিয়ারি আগে দেয়া হয়েছিল, ইরান তা উপেক্ষা করেছে।

“রাশিয়া এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর চালান পেয়েছে, এবং খুব সম্ভবত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেনে, ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করবে,” ব্লিংকেন বলেন। “ইরানের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পাবার ফলে রাশিয়া তাদের নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রণাঙ্গন থেকে দূরের লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে।”

ব্লিংকেন এবং ল্যামি কথা বলার কিচ্ছুক্ষণ পর, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকে “ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি” হিসেবে বর্ণনা করে বলে, তারা ইরানের উপর শাস্তি আরোপ করবে। শাস্তির মধ্যে থাকবে ইরানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি বাতিল এবং ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা।

“আমরা ইরান এয়ার-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে কাজ করবো,” তারা বলে।

ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্রর পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ করার দৃশ্য। ফাইল ফটোঃ ২৫ মে, ২০২৩।

ড্রোন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত কয়েক বছরে ইরান, চীন, রাশিয়া, তুর্কীয়ে এবং অন্যান্য দেশের ব্যক্তি এবং কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যাদের বিরুদ্ধে ইরানের ড্রোন উৎপাদন কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করার কথা ইরান অস্বীকার করা সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

নিষেধাজ্ঞার খবর এমন সময়ে এলো যখন ব্লিংকেন আর ল্যামি বুধবার এক সাথে ইউক্রেনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা নিয়ে আলাপ করবেন।

ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলেন্সকিকে পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আক্রমণ করার অনুমতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের উপর চাপ বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহিত করবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র আত্মরক্ষার স্বার্থে রাশিয়ার ভেতরে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু আক্রমণের দূরত্ব সীমিত করা হয়েছে। বেশি গভীরে আক্রমণ করার অনুমতি দিলে সংঘাতের মাত্রা এবং পরিধি বেড়ে যাবার আশঙ্কা থেকে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বাইডেন-স্টারমার আলোচনা

তবে ইউক্রেন নিজের তৈরি অস্ত্র দিয়ে মস্কো অঞ্চলসহ রাশিয়ার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার তারা আড়াই বছর ধরে চলা যুদ্ধে রাশিয়ার ভূখণ্ডে তাদের সবচেয়ে ব্যাপক ড্রোন হামলার একটি চালায়।

কিয়েভে ব্লিংকেন এবং ল্যামির এই বিরল যৌথ সফরের ঘোষণা প্রথা ভঙ্গ করে আগেই প্রকাশ করা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সমর্থনের ইঙ্গিত হিসেবে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমারের বৈঠক হবে, যেখানে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য সাহায্য নিয়ে আলোচনা হবে।

ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ সপ্তাহান্তে প্রকাশ হতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যারা এ’বিষয়ে ওয়াকিবহাল, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায় ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ শুরু হয়ে গেছে।

রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করার কথা ইরান অস্বীকার করে।

“সংঘাতে লিপ্ত পক্ষগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করাকে ইরান অমানবিক বলে মনে করে। এর ফলে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, অবকাঠামো ধ্বংস হয় এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা পিছিয়ে পড়ে,” জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধির সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা কয়েক মাস ধরে রাশিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার জন্য ইরানকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।