যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ডাউন ব্যালটের ফলকে প্রভাবিত করার জন্য রাশিয়া, ইরান ও চীন তাদের প্রচেষ্টা বাড়িয়ে তুলছে। । মূলত তারা আমেরিকান ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য বেশ কয়েক ধরনের সূক্ষ্ম ও সর্বাধুনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে তাদের হালনাগাদ বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সতর্ক করেছে যে রাশিয়াই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি। রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের প্রচারণার লক্ষ্য হল রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে রাখা।
সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে আলোচনা করছেন বিধায় নাম না প্রকাশের শর্তে এক জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদদাতাদের ব্রিফিং দেওয়ার সময় বলেন, ক্রেমলিনের মদদপুষ্ট গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান আরটির তৈরি করা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রুশ সক্রিয়বাদীরা “ভোটারদেরকে সাবেক প্রেসিডেন্টের পক্ষ নেওয়ার জন্য প্রভাবিত করতে মস্কোর উদ্যোগে সমর্থন জানাচ্ছে এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের জেতার সম্ভাবনা ধ্বংস করছে।”
কর্মকর্তা জানান, ক্রেমলিনের-নির্দেশনায় এ ধরনের প্রচারণার সংখ্যা বাড়ছে, যার মধ্যে আরটির কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত। শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছোট-ছোট নির্বাচনকে প্রভাবিত করাও এর লক্ষ্য, বিশেষত, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্র আরটির দুই কর্মকর্তাকে মিথ্যে পরিচয় ব্যবহার ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে টেনেসি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেনেট মিডিয়ার কাছে এক কোটি ডলার পাচারের অভিযোগ এনেছে। টেনেট মিডিয়া এক দল রক্ষণশীল রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জন্য ভিডিও ও পডকাস্ট তৈরি করে।
কৌঁসুলিরা জানান, তাদের লক্ষ্য ছিল রাশিয়াপন্থি নীতিমালা প্রচার ও বিতরণের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি করে তা ছড়িয়ে দেওয়া ।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শুক্রবার উল্লেখ করেছে, নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করার উদ্যোগে রাশিয়া একা নয়। তারা সতর্ক করেন, আমেরিকার জনগণ ভোট দিতে যাওয়ার প্রায় ৬০ দিন বাকি থাকতে তেহরান ও বেইজিংও এ ধরনের উদ্যোগে সক্রিয় রয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, “এ বছরের নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে আগের তুলনায় অনেক বেশি জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে ইরান। যদিও তাদের কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গি আগের মতোই আছে”। তিনি ইরানের পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় জানান, “তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন সৃষ্টি করতে ও যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি ভোটারদের ভরসা কমাতে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।”
তবে চীনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, যতদূর বোঝা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বেইজিং এখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেদেরকে আলাদা রাখতে চাচ্ছে। তারা ট্রাম্প ও হ্যারিসের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখে না।
তবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যাতে মনে হতে পারে চীন অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো “অবগত আছে যে পিআরসি (পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না) যুক্তরাষ্ট্রের ডাউন-ব্যালট দৌড়কে প্রভাবিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। যেসব প্রার্থীকে তারা পিআরসির মৌলিক নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে, তাদেরকে লক্ষ্য করে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
মিশা কোমাদোভস্কি এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।