মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও আরও কয়েকজন সিনিয়র জঙ্গি সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার ঘোষণা দিয়েছে। এটাই এই হামলার নেপথ্যের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রথম উদ্যোগ।
নিউইয়র্ক সিটি ফেডারেল কোর্টে দায়ের করা সাত অভিযোগের মধ্যে আছে বিদেশি জঙ্গি সংগঠনকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া ও মানুষের প্রাণহানি ঘটানো, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হত্যার ষড়যন্ত্র এবং জঙ্গিবাদের অর্থায়ন। একইসঙ্গে হামলায় ব্যবহারের জন্য হামাসের অর্থায়ন, তাদেরকে রকেটসহ অন্যান্য অস্ত্র ও সামরিক উপকরণ দেওয়ার দায়ে ইরান ও লেবাননের হেজবুল্লাহ বাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলার প্রভাব মূলত প্রতীকী। ধারণা করা হয়, গাজার কোনো এক সুড়ঙ্গে লুকিয়ে আছেন সিনওয়ার এবং বিচার বিভাগের ভাষ্যমতে, ছয় বিবাদীর তিনজনই ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করছেন (এসব অভিযোগের ফলে) হামাসের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উল্লেখ্য,যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে ১৯৯৭ সালে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
গত কয়েক দশক ধরে এই সংগঠনটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী বোমা হামলা সহ বেশি কিছু ধারাবাহিক ও প্রাণঘাতি হামলার জন্য দায়ী।
ফেব্রুয়ারিতে সিলবদ্ধ অবস্থায় এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছিল যাতে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে ও অন্যান্য বিবাদীকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। তবে জুলাই মাসে হানিয়ের মৃত্যু ও এ অঞ্চলে আরও কিছু ঘটনার প্রেক্ষাপটে গোপনীয়তার বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা কমে গেলে মঙ্গলবার এই সিল খোলা হয়েছে, বলছে বিচারবিভাগ।
এক ভিডিও বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেন, “আজকে যেসব অভিযোগ উন্মোচন করা হয়েছে, সেগুলো হামাসের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগের শুধু একটি অংশ মাত্র।” “এটাই আমাদের শেষ পদক্ষেপ নয়।”
এই মামলার বিষয়ে কথা বলার অনুমোদন না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা এপিকে বলেন, এসব অভিযোগে চলমান (যুদ্ধবিরতির) দরকষাকষিতে কোনো প্রভাব পড়বে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
ইরানে হানিয়ের মৃত্যুর পর সিনওয়ার হামাস প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছেন। ধারণা করা হয়, গত ১০ মাসের বেশিরভাগ সময় তিনি গাজার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে কাটিয়েছেন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তিনি কতটুকু যোগাযোগ রক্ষা করছেন, সে বিষয়টিতে ধোঁয়াশা রয়েছে। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
হানিয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছিল।
অন্যান্য অভিযুক্ত হামাস নেতার মধ্যে আছেন হামাসের সশস্ত্র সংগঠনের উপ-নেতা মারওয়ান ইসা। তিনি গত বছরের হামলার পরিকল্পনায় ভূমিকা রেখেছিলেন। ইসরায়েল বলেছে, মার্চে মধ্য গাজার একটি ভূগর্ভস্থ কমপাউন্ডে জেট বিমানের হামলায় তিনি নিহত হন। আরো আছেন হামাসের কাতারভিত্তিক সাবেক নেতা ও হানিয়ের অপর সহকারী খালেদ মাশাল এবং হামাসকে আড়াল থেকে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক নেতৃত্ব দেওয়া মোহাম্মেদ দেইফ। ধারণা করা হয়, জুলাই মাসে দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন দেইফ। অপর অভিযুক্ত হলেন হামাসের লেবাননভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি প্রধান আলি বারাকা।