কলকাতায় চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদ যেভাবে গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। ফটোঃ ২৭ অগাস্ট, ২০২৪।

“এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা, যেভাবে মানুষ মানুষকে সংগঠিত করেছিল, স্বাধীনতার আগের রাত্রে গত ১৪ আগস্ট,” বলছিলেন ঝিলম রায়। বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ছাত্রী ও সংগঠক, ঝিলম বলছিলেন কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াই কিভাবে গড়ে উঠলো আন্দোলন, যে আন্দোলন রাতারাতি এলোমেলো করে দিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসকে।

“একেক জায়গায় যেন একেক রকম। কোথাও পাড়ার বন্ধুরা নিজেরাই মিছিল করলো। কোথাও এগিয়ে এলো কোনো গানের দল, কোথাও বা নাচের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। ক’দিনের মধ্যেই একজোট হয়ে গেল সবাই," বলছিলেন রায়।

"অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক দল যেমন সিপিআইএম বা বিজেপিও মাঠে ছিল, কিন্তু স্বাধীনতার রাতে যে গণবিস্ফোরণ রাস্তায় রাস্তায় দেখা গেল তার রাশ যে পুরোপুরি সাধারনের হাতে ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না,” তিনি বলেন।

গত ৯ আগস্ট কলকাতার অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল আর জি করে এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে রাস্তায় নেমে আসে প্রায় গোটা রাজ্য। শুরু হয় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল।

কলকাতায় শিক্ষানবিশ ডাক্তারকে ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ করছে। ফটোঃ ১৩ অগাস্ট, ২০২৪।

ঘটনার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে গত ১৪ আগস্ট রাতে পাড়ায় পাড়ায় মহিলা-পুরুষ-শিশু-যুবক মিছিল করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন, গান গেয়েছেন মৃতার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে। ঝিলম জানালেন, তাঁদের হিসাব মতো পশ্চিমবঙ্গের মোটামুটি আড়াইশো জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে ওই রাতে।

আন্দোলন সাধারণ মানুষের

এরই মধ্যে আন্দোলন যে আরো ধারালো হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের পথে নামা দেখেই। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে মিটিং-মিছিল শুরু করেছে, বিরোধীদের পাল্টা ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করতে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিরোধী কারা? মূল স্রোতের রাজনৈতিক দল যেমন সিপিআইএম বা বিজেপি, নাকি সাধারণ মানুষ?

কলকাতা শহরে অন্তত মনে হচ্ছে, আন্দোলন এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী, চাকুরীজীবী, পেশাজীবী থেকে কর্মহীন সবাই। অবশ্যই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তার, নার্স, প্যারা-মেডিক বা অন্যান্য কর্মীরা অনেকটাই রয়েছেন আন্দোলনের সামনের সারিতে।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্বালে শিক্ষানবিশ ডাক্তার ধর্ষণ আর হত্যার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন করে কলকাতায় মধ্যরাতের বিক্ষোভ। ফটোঃ ১৪ অগাস্ট, ২০২৪।

বিভিন্ন হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করেন বনশ্রী চ্যাটার্জি। তিনি বলছিলেন, এই আন্দোলন তাদের সবাইকে আতঙ্কিত করেছে। “আমরা সবাই আতঙ্কিত এবং আমাদের দাবিও একটাই যে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। আর এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা মাথায় রেখে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।”

বনশ্রী কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু তা সত্বেও তাঁর জোরালো বক্তব্য প্রমাণ করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-বিরোধী এই আন্দোলন এখনো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষই।

ঢাকার 'ফিল্মের রিমেক হিট হবে না'

এর অন্যতম প্রধান কারণ সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। তাঁর দলেরই দক্ষিণ কলকাতার ৮৫ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা এই প্রসঙ্গে বললেন, “এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আর জি করের দায়িত্বে থাকা প্রিন্সিপালকে (সন্দীপ ঘোষ) সাসপেন্ড বা গ্রেফতার না করে কিভাবে মাত্র চার ঘন্টার মধ্যে অপর একটি মেডিকেল কলেজের (ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ) একই পদে বসিয়ে দেওয়া হলো বুঝলাম না। এতে প্রচন্ড ক্ষেপে যান মানুষ।”

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের 'সিনেমার রিমেক' পশ্চিমবঙ্গে 'হিট হবে না' বলে মনে করছেন কলকাতায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। ফাইল ফটোঃ ৫ অগাস্ট, ২০২৪।

ওই নেতার ব্যাখ্যা যে দিদি অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর আশপাশে থাকা উপদেষ্টারা ভুল বোঝাতে শুরু করেছেন। “আবার এটাও হতে পারে যে ওই দিন দিদি কলকাতায় না থাকার ফলে, তাঁর অজান্তেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” তিনি বলেন।

যেটাই হোক না কেন, মানুষ যে ক্ষেপে আছেন তা স্বীকার করে ওই নেতা বললেন, “বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আমাদের আরো বিপদে ফেলে দিল। বাংলাদেশ দেখে এখানে সবাই ভাবলেন তারাও সরকার ফেলে দিতে পারেন।”

তবে তিনি এও যোগ করলেন যে “কোনো সিনেমা যখন হিট করে, তখন সবাই সেটা দেখতে যায়। কিন্তু যখন তার ‘রিমেক’ হয়, তখন তা আর হিট করে না। ঢাকার পুনরাবৃত্তি কলকাতায় হবে না।”

আন্দোলন নতুন দাবি তুলছে

এই আন্দোলনে মহিলাদের মধ্যে ঝিলম রায় বা বনশ্রী চ্যাটার্জির মতো যাঁরা পথে নেমেছেন, তাঁরা এর নামকরণ করেছেন, ‘রিক্লেম দ্যা নাইট’ বা রাত দখলের অধিকার, যে অধিকার মহিলাদের সব দেশেই অপেক্ষাকৃতভাবে কম। কলকাতার মুসলমান সমাজ থেকেও একাধিক মহিলাকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে।

এরা প্রধানত জানতে চাইছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যাঁরা ‘সিন্ডিকেট’ বা সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী চালান তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না?

দিল্লিতে ২০১২ সালে "নির্ভয়া" হত্যার পর নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। ফাইল ফটোঃ ৭ মার্চ, ২০১৫।

আগস্টের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শুধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়নি, নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের উপরে হওয়া অত্যাচারের বিচার চাওয়া হয়েছে। অতীতের অত্যাচারের ঘটনার বিচার কেন এখনো হলো না তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও।

পাশাপাশি, হাসপাতাল-সহ সর্বত্র যৌন হেনস্থা বন্ধের লক্ষ্যে ২০১২ সালে দিল্লিতে এক মহিলার গণধর্ষণ এবং হত্যার (নির্ভয়া মামলা) পরে ভারতে ২০১৩ সালে যে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা বিরোধী’ আইন আইন পাস হয়েছিল, তা কেন সব স্তরে বাস্তবায়িত হচ্ছে না প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবায় মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু এর কোনো সরকারি হিসাব এখনো নেই কেন সে উত্তরও চাইছেন সমাজ কর্মীরা।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় আন্দোলনের গতি সীমিত হয়নি। বরং বাড়ছে। আজ অরিজিৎ সিং-এর মত সুপারস্টার গায়ক প্রতিবাদী গান লিখে ফেলছেন, তো কাল মাঠে নামছেন টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নায়ক-নায়িকারা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: ভুল সিদ্ধান্তের কারণে চাপের মুখে তৃণমূল নেত্রী। ফাইল ফটোঃ ১০ মার্চ, ২০২৪।

এমনকি কলকাতা ময়দানের তিন প্রধান ফুটবল দল – যাদের মাঠের শত্রুতা ঐতিহাসিক – তাদের সমর্থকরাও একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছেন চিকিৎসক হত্যার। মিছিল করছেন যৌনকর্মীদের ছেলেমেয়েরাও। আরএ সবই প্রতিদিন নতুন করে চাপ বাড়াচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে।

তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে রাজনৈতিক চাপ

ভারতে মহিলাদের উপরে নির্যাতন ক্রমবর্ধমান। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে নাগরিক সমাজের একটি বিবৃতি বলেছে ভারতে ‘প্রতিদিন ৮৭ জন মেয়েকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়।’ তাঁদের অনেককে হত্যাও করা হয়েছে। এই কারণে বিদেশী পত্র-পত্রিকায় ভারতকে অতীতে বিশ্বে ‘ধর্ষণের রাজধানী’ বলে চিহ্নিতও করা হয়েছে।

যদিও এই তথ্য সঠিক নয়, কারণ শুধু ধর্ষণের পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে ভারতের থেকে কয়েকগুণ বেশি মহিলা ও শিশু ধর্ষণ অনেক দেশেই হয়, এর মধ্যে ইউরোপের দেশও রয়েছে। যদিও এর পাল্টা বক্তব্য রয়েছে।

বলা হয়, ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার সে সব দেশে অনেক বেশি সংখ্যক মহিলা প্রকাশ্যে ধর্ষণের মামলা রুজু করেন। যা সামাজিক বৈষম্যের কারণে বা ভয়ের কারণে করতে পারেন না ভারতের মহিলারা।

কিন্তু যেটা প্রশ্ন সেটা হল, ভারতে যদি নিয়মিত মহিলাদের ধর্ষণ করা হয় এবং এদের অনেককে হত্যা করা হয়, তবে আরজি করের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে এতো বড় আকার ধারণ করল কী করে, বিশেষত যখন বলিষ্ঠ প্রশাসক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিতি রয়েছে।

এই প্রশ্নের উত্তরে পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বললেন, নানান কারণে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছিল।

“নতুন নতুন আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসছিল, কখনো মানুষ টেলিভিশনে দেখছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক মহাসচিব) বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে, কখনো গ্রেপ্তার হচ্ছেন অন্য কোনো নেতা। এরই পাশাপাশি চলছে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডামি, সর্বাত্মক হিংসা প্রভৃতি। আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে একটা ‘টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি’ – বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিক বেয়াদবি।

"এটা প্রায় গত দেড় যুগ ধরে দেখে দেখে মানুষ ক্ষেপে ছিলেন। তারপরে যখন রাস্তাঘাটে নয়, একেবারে কর্মক্ষেত্রে এবং বিশেষত একটি হাসপাতালে একজন মহিলাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হলো, তখন মানুষ যেন আর থাকতে পারলেন না, ফেটে পড়লেন,” মুখোপাধ্যায় বলেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় ভুল

এর সঙ্গে যুক্ত হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরপর ভুল সিদ্ধান্ত, যার কথা দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল নেতাও বলেছিলেন।

অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় বললেন, “মমতার দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি নানান ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করতে পারতেন, প্রিন্সিপালকে দ্রুত সাসপেন্ড করতে পারতেন ইত্যাদি। কিন্তু সেসব না করে তিনি প্রিন্সিপালকে অন্য কলেজে বহাল করলেন, আর শিশুসুলভ বিবৃতি দিয়ে বললেন সাত দিনের মধ্যে দোষীর ফাঁসি চাই।

“হয়তো মমতা বুঝতে পারেননি যে মানুষের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। একজন সাধারণ মেয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে সিপিআইএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে মানুষও তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু তাঁর মনে রাখা প্রয়োজন ছিল, অনেকদিন আগে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে সেই লড়াই অতীতের একটি অধ্যায় হয়ে গিয়েছে,” অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় বলেন।

নির্বাচন বহু দূর

এরপরেও, তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যে এর পরের বড় নির্বাচন অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আরো অন্তত ১৮ মাস পরে। এই ঘটনার একটা প্রভাব সেই নির্বাচনে পড়বে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের হার ও আসন দুইই কমবে বলে মনে করছেন অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়। হাতে সময় থাকার কারণেই হয়তো তৃণমূল খানিকটা সামলে নেবে।

দ্বিতীয়ত, এখনো এই আন্দোলন গ্রামে অতটা ছড়ায়নি বলে মনে করছেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। “এটা অনেকটাই শহরের মধ্যবিত্ত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে অনেক আন্দোলনই শহরে শুরু হয়ে গ্রামে ছড়ায়। সিপিআইএম আমলেও আমরা এটা দেখেছি। তারা প্রথমে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে হেরেছে, তারপরে সেটা গ্রামে প্রতিফলিত হয়েছে।”

তবে ঝিলম রায় মনে করেন যে ‘রাত দখলের’ এই আন্দোলন ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের জেলায় এবং গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়েছে। “আমরা এমন অনেক জায়গায় সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি যে জায়গা কলকাতা শহরে নয়, শহরের বাইরে,” বলেন ঝিলম।

তবে তৃণমূলের আরো একটা বড় সুবিধার কথা অধ্যাপক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় ছাড়াও অনেকই বললেন। সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ধীরে ধীরে আবার সংগঠিত হচ্ছে, যদিও নির্বাচনী রাজনীতিতে এখনো পর্যন্ত তার প্রতিফলন ঘটেনি।

“কিন্তু একটা বিষয় সিপিআইএম বুঝেছে, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে লড়া যাবে না। যেটা হয়তো তারা এতদিন করছিলেন। যার ফলে মানুষ আরো দূরে সরে যাচ্ছিলো। সেটা বন্ধ হবার ফলে এবং কিছু নতুন মুখ উঠে আসার ফলে, আমার ধারণা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএম ভালো ভোট পাবে,” বললেন অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়।

সে ক্ষেত্রে অবশ্য সুবিধা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসেরই। মমতা-বিরোধী ভোট যদি বামফ্রন্ট এবং বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়, তাতে লাভ তৃণমূলেরই। এই ভোট-ভাগ বিজেপি রুখতে পারবে বলে এখনো কেউই মনে করছেন না। এর প্রধান কারণ, এই আন্দোলন চলাকালীন গত ২৮ তারিখে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর ঘেরাও করার যে কর্মসূচি বিজেপি নিয়েছিল তা সফল হয়নি। বিরাট সংখ্যক মানুষ এই অভিযানে অংশ নেবে বলে মনে করা হলেও, হাজার পাঁচেকের বেশি লোক ছিল না।

এইসব কারণেই আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা এখনো বলছেন, “সিনেমার রিমেক হিট হয় না।