ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেশী আসাম এবং দিল্লির সাথে তীব্র বাক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে একজন ডাক্তারের ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিবাদে যে প্রবল বিক্ষোভ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে চলছে, তার জন্য বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার (২৮ অগাস্ট) কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করে পাল্টা হুমকি দেন।
“মোদী বাবু,আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন? মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, আসামও থেমে থাকবে না,” বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক জনসভায় বলেন।
“নর্থ-ইস্টও থেমে থাকবে না, উত্তর প্রদেশ থেমে থাকবে না, বিহারও থেমে থাকবে না, ঝাড়খন্ড থেমে থাকবে না। উড়িষ্যাও থেমে থাকবে না। আর দিল্লিও থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ার আমরা টলমল করে দেব,” তিনি বলেন।
दीदी, आपकी हिम्मत कैसे हुई असम को धमकाने की? हमें लाल आंखें मत दिखाइए। आपकी असफलता की राजनीति से भारत को जलाने की कोशिश भी मत कीजिए। आपको विभाजनकारी भाषा बोलना शोभा नहीं देता।দিদি, আপনার এতো সাহস কীভাবে হলো যে আপনি অসমকে ধমকি দিচ্ছেন? আমাদের রক্তচক্ষু দেখাবেন না। আপনার অসফলতার… pic.twitter.com/k194lajS8s
— Himanta Biswa Sarma (@himantabiswa) August 28, 2024
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যর পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে বিজেপির তরফ থেকে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব সারমা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের একাংশর ভিডিও পোস্ট করে তাঁকে “রক্তচক্ষু” না দেখানোর আহ্বান জানান।
“দিদি,আপনার এতো সাহস কীভাবে হলো যে আপনি অসমকে ধমকি দিচ্ছেন? আমাদের রক্তচক্ষু দেখাবেন না। আপনার অসফলতার রাজনীতি দিয়ে একদম ভারতকে অগ্নিগর্ভ করে তোলার চেষ্টা করবেন না। বিভাজনকারী ভাষা বলাটা আপনার শোভা পায় না,” মুখ্যমন্ত্রী সারমা লেখেন।
বাকযুদ্ধের সূচনা হয় আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তার ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী নিয়ে। মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’ নামের একটি সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় নবান্ন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে, যার অগ্রভাগে ছিল বিজেপির সমর্থকরা। মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় এবং প্রায় দেড়’শ বিক্ষোভকারীকে আটক করে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
বুধবার বিজেপির ডাকে বনধ বা হরতাল পালন করা হয়। একই দিন টিএমসিপি-র সভায় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের পুরানো স্লোগান “বদলা নয়, বদল চাই” অর্থাৎ প্রতিশোধ নয়, পরিবর্তন চাই, সেটা ত্যাগ করার ঘোষণা দেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। আজ বলছি, ওই কথা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার, সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন।’’
'রাষ্ট্রবিরোধিতার' অভিযোগ
বিরোধীদের অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথাকে প্রতিহিংসার ডাক হিসেবে গণ্য করছেন।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে “রাষ্ট্রবিরোধিতার” অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন। বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাংলায় আগুন জ্বললে” অন্যান্য রাজ্যতেও জ্বলবে বলে যে হুমকি দিয়েছেন, সেটাকে “আপত্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন মজুমদার।
“মানুষকে ভয় দেখানো এবং হিংসা ছড়ানোর জন্য এই মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতা এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত,” মজুমদারকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন জানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে দায়িত্বরত ৩১ বছর বয়সী চিকিৎসককে ৯ই আগস্ট হত্যা করায় গোটা ভারতে প্রতিবাদ দেখা দেয়। এতে সে দেশে নারীদের বিরুদ্ধে নিত্যদিনের সহিংসতার উপর আলোকপাত করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন এই আক্রমণ ভারতজুড়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মীদের অসহায়ত্বকেই তুলে ধরছে।