আফগানিস্তানের তালিবান নেতারা সে দেশের নারী অধিকার আরও সীমিত করতে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন। নারীদের গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি করা বা প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সব সময় তাদের দেহ ও মুখ পর্দায় ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ভিডিও-বার্তা মারফত বলেছেন, সে দেশের সুপ্রিম নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদনের পর তালিবানের বিচার মন্ত্রণালয় বুধবার তথাকথিত পাপ-পুণ্য বিষয়ক যে নতুন আইন জারি করেছে তারই অংশ এই বিধিনিষেধ।
ইসলামি শরিয়া আইনকে কঠোরভাবে ব্যাখ্যা করে তালিবান। সেই আইনের অধীনে ৩৫ ধারা সম্বলিত এই নথি তিন বছর আগে ক্ষমতা পুনদর্খল করা তালিবানের পাপ ও পুণ্য বিষয়ক প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
এই নয়া আইনে ব্যাপকভাবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অনুশীলনকে গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের নানা দিক যেমন পরিবহন, সঙ্গীত, ক্ষৌরকর্ম, উদযাপন ও জনপরিসরে নারীদের আচরণ ও উপস্থিতি ইত্যাদির উপর বিধিনিষেধ চাপানো হয়েছে।
আফগান সমাজের নারীদের নিশানা করে এই আইনে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, নারীদের কণ্ঠস্বর কোমল ও অনুচ্চকিত হওয়া উচিত এবং প্রকাশ্যে তাদের গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি করা বা জোরে পাঠ করা অনুচিত। মূলত তা যেন শোনা না যায়। রক্ত বা বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকলে নারীদের পুরুষের দিকে এবং পুরুষের নারীদের দিকে তাকানোর অনুমতি নেই।
নতুন আইন অনুযায়ী জনপরিসরে নারীদের সব সময় তাদের শরীর ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে যাতে উত্তেজনা এড়ানো যায় ও অন্য কেউ উত্তেজিত না হয়। এই আইনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, নারীদের পোশাক পাতলা, ছোট বা আঁটোসাটো হওয়া চলবে না।
এই আইনি নথি তালিবানের পুণ্য প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতে এই হতদরিদ্র, যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ এশীয় দেশজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ ও বলবৎ করার ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। বিধিভঙ্গকারীকে বন্দি করার আগে তারা এক ঘন্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত সতর্ক করতে পারে এবং যথোপযুক্ত মনে হলে শাস্তিস্বরূপ তারা আইন অমান্যকারীর সম্পত্তিও জব্দ করতে পারে।
পাপ ও পুণ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক নজরদারিতে আছে।
আরেকটি ধারায় সরকারি পরিবহনে গানা বাজানো, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারী যাত্রীদের চলাচল ও সম্পর্কবিহীন পুরুষ ও নারীর মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।