বিএনপি নেতা তারেক রহমান 'জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার' প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ২০ অগাস্ট ভিডিও থেকে নেয়া স্থির চিত্র।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার (২০ অগাস্ট) এক ভিডিও বার্তায় দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন, তবে তিনি কোন সময় সীমা উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকেন।

রহমান ৭ অগাস্ট ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে মঙ্গলবারের ভিডিও বার্তায় তিনি কোন সময়সীমা না দিয়ে নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের জনগণের সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

“জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা,” তিনি বলেন। “রাষ্ট্র সংস্কারের পথ ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে।”

“কাঙ্খিত রাষ্ট্র সংস্কারে গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে,” তিনি বলেন।

গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত চলে যাওয়ার পর, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা, নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ করেন। ডঃ ইউনুস বলেছেন, দেশের শাসন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের প্রয়োজন আছে।

ঢাকার পল্টনে ৭ অগাস্ট বিএনপির জনসমাবেশ।

গণমাধ্যমের জন্য পরামর্শ

বিএনপি নেতা রহমান তার ভিডিও বার্তায় দেশের গণমাধ্যমকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের “দুর্নীতি, ভোট ডাকাতি, নিপীড়ন-নির্যাতনের” চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

লন্ডনে রেকর্ড করা এই বিবৃতিতে রহমান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী” অভিহিত করে বলেন, জনগণ চায় যে গণমাধ্যম ‘হাসিনা পালিয়েছে’ শব্দ দুটি তাদের পরিবেশনায় ব্যবহার করবে। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অন্য কোন শব্দ প্রয়োগ “অপকৌশল” হিসেবে দেখা হতে পারে।

“হাসিনা পালিয়েছে' শব্দটির পরিবর্তে কোনো গণমাধ্যম যদি ভিন্ন শব্দ প্রয়োগের অপকৌশল নেন সেটি জনগণের কাছে আপনাদের বিবেকের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে,” বিএনপি নেতা তাঁর বার্তায় বলেন।

তিনি গত ১৫ বছরে হত্যা-গুম হওয়া মানুষ, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত মানুষের পরিবারদের দুঃখ-দুর্দশা, ‘আয়না ঘরের’ নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে রিপোর্ট পরিবেশন করার আহ্বান জানান।

“গণমাধ্যমে হাসিনার অপকর্ম ফ্রেম বন্দি থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ হাসিনার মতো ভোট ডাকাতি গনহত্যায় লিপ্ত হতে সাহস করবেনা, যা গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করবে,” রহমান বলেন।

হামলার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তার দাবীতে ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ফটোঃ ৯ অগাস্ট, ২০২৪।

গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে 'ষড়যন্ত্র'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ৫ অগাস্ট-এর গণঅভ্যুত্থানের “সাফল্য ও উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিতে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে।” তিনি দাবী করেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা “একটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা” ছিল, যেটা সফল হয়নি।

“হাসিনা পতন আন্দোলনের পক্ষের শক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে বিতাড়িত অপশক্তি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে,” তিনি বলেন।

সরকার পতনের পর কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়। হামলার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তার দাবীতে হিন্দু সম্প্রদায় ঢাকার শাহবাগে কয়েক দিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, “পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র” এখনো থেমে নেই। “এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র—জনতার ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সু—সংহত করাই এই মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার,” রহমান বলেন।

সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের তালিক তৈরি করার যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রহণ করেছে, রহমান সেটাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের পরিবারদের রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মান জানানোর আহ্বান জানান।

তিনি প্রতি বছর ৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করারও আহ্বান জানান।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১৫ জুলাই থেকে ১১ অগাস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৭২ জন নিহত হন ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর।