যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সোমবার দিনের শেষে তেল আবিবে জানান, গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এতে রাজি হওয়া বা না হওয়ার বিষয়টি এখন হামাসের ওপর নির্ভর করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্লিংকেন বলেন, “এখন হামাসের দায়িত্ব হল এটা মেনে নেওয়া” এবং এরপর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় “একসঙ্গে বসে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা।” তবে সশস্ত্র সংগঠন হামাস যে বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, সেগুলোর সমাধান হয়েছে কী না, তা জানাননি ব্লিংকেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে নবমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেলেন ব্লিংকেন। তিনি এমন সময় এই সফরে করছেন যখন যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
ইসরায়েল ছেড়ে যাওয়ার পর আরও দরকষাকষির জন্য ব্লিংকেন মিসর ও কাতার যাবার কথা।
গত সপ্তাহে দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে সব ধরনের ব্যবধান ঘোচাতে পারে এমন একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সপ্তাহে কায়রোতে আবারও আলোচনা শুরু হবে। ব্লিংকেন বলছেন, হামাস এই প্রস্তাব মেনে নিলেও কিছু “জটিল বিষয়” রয়েছে যার সমাধানে “নেতাদের কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত” নিতে হবে। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
প্রস্তাব গ্রহণের সময় শেষে হয়ে আসছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে ব্লিংকেন বলেন, “আমরা কখনোই হাল ছেড়ে দিব না”। তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন।
সোমবার ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, নেতানিয়াহু ‘একটি মূলনীতিতে অটল’, যা হল, গাজা ভূখণ্ড ও মিসরের মাঝের সীমান্ত ফিলাডেলফি করিডরে সবসময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী উপস্থিত থাকবে। ইসরায়েলের ভাষায়, হামাস যাতে নতুন করে কোনো মারণাস্ত্র না পায়, সে জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, হামাস নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীদের অবমাননার অভিযোগ আনেন। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য সামি আবু জুহরি দোহায় দুই দিনের আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে এমন দাবিকে উড়িয়ে দেন এবং বলেন, ‘এটি একটি মরীচিকা’।
বৈরুতে শীর্ষ হেজবুল্লাহ যোদ্ধা ও তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান ও ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পারে। এ হামলায় পুরো অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন উদ্বেগের কারণে দ্রুত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য চাপ রয়েছে।
ইসরায়েল বৈরুতের হামলার দায় নিলেও তেহরানের হামলার দায় নেয়নি। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ হামলার জন্যেও ইসরায়েলই দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
ভয়েস অফ আমেরিকার নাতাশা মজগোভায়া ও কিম লুইস মূল প্রতিবেদনে কাজ করেছেন। কিছু তথ্য এপি, এএফপি ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।