এ’সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির যে কনভেনশন (ডিএনসি) শুরু হচ্ছে, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিক্ষোভ করার জন্য হাজার হাজার অ্যাক্টিভিস্ট হাজির হবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা অর্থনৈতিক অবিচার থেকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করার আশা করবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস তাঁর সমর্থকদের চাঙ্গা করেছেন এবং কনভেনশনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত হবার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু প্রগতিশীলরা বলছে তাদের লক্ষ্য বদলায়নি।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছে, তারা গত মাসে মিলওয়াউকিতে রিপাবলিকান দলের কনভেনশন থেকে শিক্ষা নিয়েছে, এবং শিকাগোতে আরও বড়, শক্তিশালী বিক্ষোভের প্রত্যাশা করছে। সামাজিক ইস্যুতে আন্দোলনের ইতিহাস আছে শিকাগোর।
কারা বিক্ষোভ করছে?
কনভেনশন চলার সময় প্রতিদিন বিক্ষোভ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাদের কর্মসূচিতে ভিন্নতা থাকলেও, অনেক অ্যাক্টিভিস্ট একমত যে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
কনভেনশন শুরুর আগের দিন অর্থাৎ রবিবার (১৮ অগাস্ট) শহরের বিখ্যাত মিশিগান অ্যাভিনিউ দিয়ে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে মিছিল দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে।
আয়োজক লিন্ডা লো বলেন, ডেমোক্র্যাটরা যদিও নিজ দেশে গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার, বিষয়টা আন্তর্জাতিক। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যারা নিজেদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে, তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করার জন্য তারা মিছিল করবেন।
একই সাথে তারা, বিভিন্ন যুদ্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ব্যায়ের প্রতিবাদ করা হবে – যে অর্থ স্বাস্থ্যসেবার জন্য খরচ করা যেত।
“আমরা মনে করি, যে শত শত কোটি ডলার ইসরায়েলকে দেয়া হচ্ছে এবং অস্ত্র-শস্ত্রর প্রবাহ, বিশেষ করে নারী ও শিশুর উপর অযৌক্তিক এবং মারাত্মক প্রভাব ফেলছে,” তিনি বলেন। “এ’সব কিছু একই সূত্রে গাঁথা।”
প্রতিবাদকারীদের সব চেয়ে বড় গ্রুপ, দ্য কোয়ালিশন টু মার্চ অন দ্য ডিএনসি কনভেনশনের প্রথম এবং শেষ দিনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে।
আয়োজকরা বলছেন, তাদের প্রত্যাশা অন্তত ২০,০০০ বিক্ষোভে যোগ দেবে, যাদের মধ্যে ছাত্ররাও থাকবে যারা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছিল।
“ক্ষমতাবান লোকজন ওখানে থাকবে,” শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজক লিজ র্যাথবার্ন বলেন। “ইউনাইটেড সেন্টার (কনভেনশন ভেনু)-এর ভেতরে যারা থাকবেন তারাই কোন না কোন ভাবে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির দিকনির্দেশনা করবেন।”
তারা কোথায় প্রতিবাদ করবে?
বিক্ষোভ সমাবেশ কোথায় হতে পারবে, সে বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করার পর অ্যাক্টিভিস্টরা বছরের শুরুর দিয়ে নগর কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে মামলা করে। শহরের ওয়েস্ট সাইডে ইউনাইটেড সেন্টার-এর কাছে বিক্ষোভ করার আবেদন কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে, এবং তাদের পাঁচ কিলোমিটার দূরে লেকের পাশে এক পার্কে যেতে বলা হয়।
পরে, নগর কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড সেন্টারের কাছ দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল যাবার অনুমতি দেয়। একজন ফেডেরাল বিচারক গ্রুপের মিছিলের এক মাইল লম্বা পথ অনুমোদন করে।
দ্য কোয়ালিশন টু মার্চ অন দ্য ডিএনসি-র মুখপাত্র হাতেম আবুদায়েহ বলেন, কনভেনশনের কাছে বিক্ষোভ করতে পেরে তারা খুশি। কিন্তু তিনি মনে করেন, তাদের পছন্দের দুই মাইল লম্বা পথ বড় মিছিলের জন্য নিরাপদ হতো। এই গ্রুপ ছয়টি রাজ্য থেকে সমর্থকদের নিয়ে আসার জন্য বাস ভাড়া করছে।
“আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সর্বোচ্চ গতিতে,” তিনি বলেন।
নগর কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড সেন্টার থেকে কিছুটা দূরে এক পার্কে ভাষণ দেবার জন্য একটি স্টেজ চিহ্নিত করেছে। যারা বক্তা হিসেবে নাম লেখাবে তাদের জন্য ৪৫ মিনিট বরাদ্দ থাকবে।
ফিলাডেলফিয়া-ভিত্তিক পুওর পিপলস আর্মি, যারা অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার নিয়ে কাজ করে, তারা শহরের নর্থওয়েস্ট সাইডে হামবোল্ডট পার্কে সমবেত হবে এবং তাদের অনুষ্ঠানে তৃতীয় দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন ভাষণ দেবেন। তারা সোমবার মিছিল করে তিন মাইল পথ পারি দিয়ে ইউনাইটেড সেন্টারে যাবেন।
এই গ্রুপের কিছু সদস্য গত মাসে রিপাবলিকান দলের কনভেনশনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর মিলওয়াউকি থেকে ৮০ মাইল পথ মিছিল করে এসেছেন।
“পশ্চিম তীর আর গাজা থেকে সান ফ্রান্সিস্কো আর ফিলাডেলফিয়া, সর্বত্র গরীব মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের তাঁবুগুলোও ধ্বংস করা হচ্ছে,” গ্রুপের মুখপাত্র শেরি হনকালা এক বিবৃতিতে বলেন। “এই মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলি ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান, দু দলই করে যাচ্ছে।”
নতুন প্রার্থী কীভাবে সব বদলাতে পারে?
অনেক অ্যাক্টিভিস্ট মনে করেন হ্যারিস প্রার্থি হওয়াতে কোন কিছুই বদলাবে না, কারণ তিনি বাইডেন প্রশাসনেরই অংশ।
“আমাদের দাবী বদলায় নাই। আমি সরকারী নীতিতে কোন পরিবর্তন দেখছি না,” বলেন এরিকা বেন্টলি, যিনি মামাস অ্যাক্টিভেটিং মুভমেন্ট ফর অ্যাবোলিশন অ্যান্ড সলিডারিটির একজন সদস্য। “আপনি যদি এখানে আসেন, তাহলে আপনাকে শুনতে হবে আমাদের কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ।”
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের শিকাগোতে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তারা বিমানবন্দরে যাবার রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং কংগ্রেস সদস্যদের অফিসে অবস্থান ধর্মঘট করে। তাদের কেউ তৃতীয় দলের প্রার্থীদের নিয়ে নিজেদের এক দিনের কনভেনশন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছেন।
“মনোনীত প্রার্থী যেই হোক না কেন, আমরা ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবো, যাদের হিংস্র নীতির কারণে ইসরায়েল গাজায় ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি হত্যা করতে পেরেছে,” বলছেন ফায়ানি আবোমা মিজানি, যিনি শিকাগো অ্যালায়েন্স এগেইন্সট রেসিস্ট অ্যান্ড পলিটিকাল রিপ্রেশন-এর একজন আয়োজক।
তবে এই কনভেনশন উগ্র-ডানপন্থি, যারা ডনাল্ড ট্রাম্প‑কে সমর্থন করে, তাদেরও আকর্ষণ করবে কি না, তা পরিষ্কার না।
শিকাগো কি প্রস্তুত?
এই কনভেনশনে অংশ নিতে বা পর্যবেক্ষণ করতে আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরে আসবেন, যাদের মধ্যে থাকবে ডেলিগেট, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাংবাদিক। নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা পুলিশ এবং সিক্রেট সার্ভিসের সাথে প্রয়োজনীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে। কনভেনশন সেন্টারের আশে-পাশে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হবে।
পুলিশ সাংবিধানিক পুলিশ কাজের জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, স্থানীয় আদালত বলছে তারা গণহারে গ্রেফতারের আশঙ্কায় আরও জায়গা তৈরি করছে এবং নিরাপত্তা বলয়ের কাছে হাসপাতালগুলো তাদের জরুরী বিভাগ প্রস্তুত রাখছে।
কিন্তু কারো মনে নিরাপত্তার প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে। তারা শঙ্কিত যে, বিক্ষোভ কোন দিকে মোড় নিতে পারে তা বোঝা মুশকিল এবং সেখানে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।
“আমরা নিশ্চিত করবো যে লোকজনের ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট (বাক স্বাধীনতা) অধিকার সমুন্নত আছে, যাতে তারা সেটা নিরাপদে করতে পারে,” শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এক সাক্ষাৎকারের সময় বলেন।
অ্যাটিভিস্ট হাই থুরম্যান ১৯৬৮ সালের কুখ্যাত কনভেনশনে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই কনভেনশন ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ভয়ানক সংঘর্ষের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
চুয়াত্তর বছর বয়সী থুরম্যান এখন আলাবামা রাজ্যে বসবাস করছেন, কিন্তু তিনি শিকাগোতে এসে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করছেন।
“আমার জন্য বিষয়টা খুবই ব্যক্তিগত,” তিনি বলেন। “আমি মিল দেখতে পাচ্ছি।”