ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন, গাজায় একটি নতুন ইসরায়েলি হামলায় একজন নারী এবং তার ছয় সন্তান সহ ২৮ জন ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ১০ মাসের ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ থামাতে দুর্লভ একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছাতে নতুন করে চাপ দেওয়ার জন্য এই অঞ্চলে আরেকটি সফরের ঠিক আগে এ হামলাটি চালায় ইসরায়েল।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলছে। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মকর্তারা বলেন আলোচনা একটি সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছিল কিন্তু তারপরে আর শেষ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগী মধ্যস্থতাকারী মিশর এবং কাতার বলে, তারা গত সপ্তাহে দোহায় দুই দিনের আলোচনার পর একটি চুক্তির কাছাকাছি আসেন, কিন্তু হামাস ইসরায়েলের করা নতুন দাবিগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেয়। আগামী দিনে কায়রোতে আবার এই আলোচনা শুরু হবে।
নেতানিয়াহুর অভিযোগ
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভার সাথে কথা বলার সময় হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনায় "একগুঁয়ে" বলে অভিযুক্ত করেন এবং ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর আরও হামলার আহ্বান জানান।
"হামাস, এই মুহুর্ত পর্যন্ত তাদের অবস্থানে অনড়,” নেতানিয়াহু বলেন। "এমনকি দোহাতে আলোচনায় তারা একজন প্রতিনিধিও পাঠায়নি। তাই, হামাস এবং (ইয়াহিয়া) সিনওয়ারকে চাপ দেওয়া উচিত, ইসরায়েল সরকারের দিকে নয়," তিনি নবনিযুক্ত হামাস প্রধানের নাম উল্লেখ করে বলেন।
"আমরা আলোচনা পরিচালনা করছি এবং এমন কোনোও পরিস্থিতি নয় যেখানে আমরা শুধু দিয়েই যাব,” ইসরায়েলি নেতা বলেন। “আমরা যে নীতিগুলি নির্ধারন করেছি তা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।"
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল রূপরেখা একই রকম রয়েছে। এটি একটি তিন-পর্যায়ের প্রক্রিয়া যেখানে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। হামাস তাদের কাছে বন্দী প্রায় ৭০ জন জীবিত সহ আনুমানিক ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে শুরু করবে এবং ইসরায়েল তাদের জেলে বন্দী কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করবে।
মধ্যস্থতাকারীরা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণে প্রায় ১২০০ জন নিহত এবং প্রায় ২৫০ জিম্মিকে বন্দী করার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করছে।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ৪০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে, মৃতের সংখ্যার মধ্যে হাজার হাজার হামাস জঙ্গি রয়েছে যাদেরকে তারা হত্যা করেছে।
গাজার ২৩ লক্ষ বাসিন্দাদের বেশিরভাগই যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং একটি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা দুর্ভিক্ষ এবং পোলিও ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে ব্লিংকেনের ১০তম সফর এবং তিনি সোমবার নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করবেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। দেশটি বারবার যুদ্ধবিরতি গ্রহণের জন্য আহ্বান জানায় এবং আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু, তারা কোনও ধরণের চুক্তিতে আসতে পারেনি এবং যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহতে একটি বাড়িতে রবিবার ভোরে একটি হামলায় একজন নারী এবং তার ছয় সন্তান নিহত হন, যার মধ্যে ১০ বছর বয়সী ৫ জন জমজ সন্তান রয়েছে।
হাসপাতালটিতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একজন সাংবাদিকের মতে, দেইর আল-বালাহ শহরের পূর্বে আরেকটি হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।
হানিয়েহ হত্যার জবাব
অন্য জায়গায়, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় একটি আবাসিক ভবনের দুটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা হয়। এতে দুইজন পুরুষ, একজন নারী এবং তার মেয়ে নিহত হন। আল-আওদা হাসপাতালের মতে, মধ্য গাজায় আরও দুটি হামলায় নয়জন নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের মতে, শনিবারের শেষ রাতে, দক্ষিণাঞ্চলের শহর খান ইউনিসের কাছে একটি হামলায় একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছে।
যুদ্ধের সময় ইসরায়েল বারবার বলে, তারা শুধুমাত্র জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা করে এবং বেসামরিক মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করে কারণ জঙ্গি গোষ্ঠীটি আবাসিক এলাকায় যোদ্ধা, অস্ত্র, টানেল এবং রকেট লুকিয়ে রাখে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা শনিবার রাত শুরু করে থেকে রবিবার পর্যন্ত হামলায় ২০ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
গত মাসে দুই জন শীর্ষ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ আটকানোর জন্য গাজার লড়াই শেষ করার প্রচেষ্টার নতুন প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েল বৈরুতে একটি হামলার দায় স্বীকার করে যাতে একজন হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হন।
ইরান তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে। হানিয়াহ দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে জন্যে ইরান সফর করছিলেন। হানিয়াহ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এখন পর্যন্ত, লেবাননে ইরানের অর্থায়ন করা হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বা ইরান নিজেও এই হামলার জন্য সামরিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।