ঢাকায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কাছে ছাত্র- বিক্ষোভকারীদের হাতে সাংবাদিক হয়রানি

ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা একজনকে ছাত্র বিক্ষোভকারীরা লাঠি দিয়ে আক্রমণ করছে। ফটোঃ ১৫ অগাস্ট, ২০২৪।

ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে বৃহস্পতিবার (১৫ অগাস্ট) দায়িত্বরত সাংবাদিকদের লাঠি হাতে শিক্ষার্থী ও অন্যান্যরা হয়রানি করেছে বলে জানা গেছে।

সাংবাদিকদের মধ্যে একজন ছিলেন সকাল-সন্ধ্যা অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদক মেরিনা মিতু। তিনি একজন সহকর্মীর সাথে দায়িত্ব পালন করতে ৩২ নম্বর রোডে যান।

“আমরা দেখতে পাই- কালো শাড়ি পরিহিত একজন তরুণীকে একদল লোক তল্লাশি করছে এবং বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এই ঘটনার ছবি তুলতে চাইলে তারা আমাদের বাধা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলে,” মেরিনা মিতু ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।

এই সময়ে এলাকায় আসা সবাইকে বিক্ষোভকারীরা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং দর্শনার্থীদের পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনকে লাঠি হাতে শিক্ষার্থী এবং অন্য বিক্ষোভকারীরা বাধা দেয়।

আরেকজন সাংবাদিক, মানবজমিন পত্রিকার ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদ বলেন তিনি আগে থেকে খবর পেয়েছিলেন যে, ধানমন্ডি-৩২ নাম্বারে ঝামেলা হতে পারে। তিনি আর কয়েকজন সাংবাদিক এক সঙ্গে সেখানে যান।

ঢাকায় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর সাংবাদিক স্যাম জাহানের ফেসবুক পোস্ট।

ভিডিও না করার নির্দেশ

“আমরা দেখতে পাই রাস্তায় প্রবেশের অদূরে একদল লোক দাঁড়িয়ে পথচারীদের তল্লাশি করছে। এই ঘটনায় আমরা একটু ভয়ও পাই,” তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।

তিনি বলেন, রাস্তায় প্রবেশ করার পর তারা শুনতে পান যে, সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও না করার নির্দেশ দিয়ে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে।

“এ’সময় আমার দেখতে পাই একদল যুবক মানুষের মোবাইল তল্লাশি করছে, কাউকে মারধর করছে। তখন আমরা ছবি তুলতে গেলে বাধা দেয়। পেছন থেকে একজন আমার ঘাড় ধরে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়,” জীবন আহমেদ বলেন।

“এরমধ্যে একটা ছেলে আমাদের ছবি তোলা দেখে ফেলে। সে এসে আমাদের চাপাচাপি করতে থাকে ছবি ডিলিট করে দিতে। তখন আমরা বলি যে, কোনো ছবি তুলি নাই। এর প্রতিবাদ করলে তারা চলে যায়,” তিনি বলেন।

তবে শুধু দেশীয় গণমাধ্যম না, বিদেশী সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকরাও বিক্ষোভকারীদের হাতে হয়রানির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

ঢাকায় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর সাংবাদিক স্যাম জাহান ফেসবুকে এক পোস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মাদ ইউনূসের নব-নিযুক্ত প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্যাম জাহান ছাত্র বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে লেখেন, “আপনারা রাজনৈতিকভাবে যা অর্জন করতে চাইছেন, তা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যখন আমার ক্যামেরা থামাতে চান, আপনি যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন, আপনি যখন আমার সহকর্মীদের গায়ে হাত তোলেন, তখন আমি প্রতিবাদ করবো।”

“সাংবাদিকতা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী চলবে না,” তিনি বলেন।

ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লোকজনকে তল্লাশি এবং সাংবাদিক হয়রানির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

“গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপের নিন্দা জানাই,” আব্দুল্লাহ বলেন। “ছাত্রলীগ ফোন তল্লাশি করলেও প্রাইভেসি লঙ্ঘন, আর আজ আপনারা যেটা করলেন সেটাও প্রাইভেসি লংঘন।”