ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধা

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কাউকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১৫ অগাস্ট) সকাল থেকে সেখানে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের পদযাত্রা কর্মসূচি আটকাতে অবস্থান করছিল।

এ ছাড়াও, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শোক দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঠেকাতে মধ্যরাত থেকে ওই এলাকা দখল করে রাখে কিছু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের ১০ দিন পর ১৫ অগাস্ট ছিল বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এক দল সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করে। তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে হত্যা করা হয়।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় অনেককে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এই এলাকায় আসা সবাইকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং বিক্ষোভকারীরা দর্শনার্থীদের পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোনও পরীক্ষা করছে।

কিছু লোককে ওই এলাকায় দর্শনার্থীদের ধাওয়া করতে দেখা গেছে। পালানোর সময় কয়েকজনকে মারধর করা হয়।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অন্যদের হাতে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোকেয়া প্রাচীর ওপর হামলা

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হওয়া সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে বুধবার অবস্থান কর্মসূচি ও মোমবাতি মিছিল করা হয়।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর নেতৃত্বে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রোকেয়া প্রাচী ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্রের সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী পুরষ্কার পান।

অনুষ্ঠানের পরেই রোকেয়া প্রাচীর ওপর হামলা চালায় বিরোধীরা। এসময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রোকেয়া প্রাচী ও অন্যান্যরা। ১৪ আগস্ট, ২০২৪।

হামলার বিষয়ে রোকেয়া প্রাচী বলেন, “সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। হঠাৎ আমাদের ঘিরে ধরে বেধড়ক পেটানো হয়।”

গুরুতর আহত হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যারা পিটিয়েছে তারা আমাকে টার্গেট করে এসেছে। প্রত্যেককে আমার শিক্ষিত মনে হয়েছে। তারা খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেছে। তাদের কথাবার্তা শুনেই বুঝেছি তারা দুষ্কৃতকারী নন।”

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রোকেয়া প্রাচী বলেন, “আজ আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি, কারণ বাংলাদেশ পুড়েছে। আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি, কারণ আমাদের ১৯৭১ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি, কারণ আমাদের বঙ্গবন্ধুর ছবি পুড়েছে। ধানমন্ডির ৩২ পুড়েছে। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি বাংলাদেশ পুড়েছে বলে। আমরা এখানে কোনো রাজনীতির কথা বলতে আসিনি। বাংলাদেশ আমাদের সবার।”

তিনি বলেন, “আমরা এখানে শোক প্রকাশ করতে এসেছি শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি। তিনি আমাদের জন্য এই বাংলাদেশ দিয়েছেন, সংবিধান দিয়েছেন। এই ৩২ যখন পুড়েছে, তখন আমাদের মনে হয়েছে আমরা পুড়েছি। আমরা ধানমন্ডি ৩২-এ দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের এই মহানায়কের কাছে ক্ষমা চাইছি, আমরা লজ্জিত, বাঙালি জাতি আজ লজ্জিত।”

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন রোকেয়া প্রাচী। তাঁর বাবা আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আমলে মিরপুর ও পল্লবী শ্রমিক লীগের সভাপতি।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পালিত এই জাতীয় ছুটি বাতিল করেছে।