বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনের মানুষ ‘একতার বাংলাদেশ’ ব্যানারে যৌথভাবে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে।
সমাবেশটি জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এবং পরে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমাবেশের পর অংশগ্রহণকারীরা ধানমন্ডির রাপা প্লাজা পর্যন্ত পদযাত্রা করেন।
ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশি পরিচয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে স্বাগত বক্তব্য দেন ‘একতার বাংলাদেশ’-এর মুখপাত্র তাহমীদ আল মুদাসসির।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশি, এটাই আমাদের মূল পরিচয়। সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে উসকে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টাকারী শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।”
অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক মাহাদী আল মাহমুদ জাতি, শ্রেণি ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য একটি সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার শপথ গ্রহণে অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্ব দেন।
সমাবেশে মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। দৈনিক কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা সমান অধিকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ অধিকার চাই না, আমরা প্রত্যেক নাগরিকের মতো সমান অধিকার চাই। গত ৫২ বছরে আমাদের জনগণের ওপর হামলার বিচার পাইনি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক একই পরিবারের সদস্য। “আমরা জানি বিগত বছরগুলোতে কারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং কারা আমাদের রক্ষা করেছে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য নয়, তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করতে হবে।”
আরেক বক্তা নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ছাত্র ও স্বাধীনতাকামী মানুষ এ ধরনের অপশক্তিকে প্রতিহত করবে। আমরা মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না।”
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক সারজিস আলম বিভিন্ন ধরনের অভ্যুত্থান ও অস্থিরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা ফ্যাসিস্টরা হাতেনাতে ধরা পড়লে জানাজায় কাউকে দেখতে পাবে না।”
আয়োজনটি রাপা প্লাজা পর্যন্ত একটি পদযাত্রার মাধ্যমে শেষ হয়।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সবার জন্য মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য।
এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ‘মানুষ ও এদেশের মাটির সন্তান’ হিসেবে বিবেচনা করার আহবান জানান তিনি।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান সোমবার (১২ আগস্ট) বলেছেন, দেশের ২০ জেলায় ৩০ টি সংখ্যালঘু সংশ্লিষ্ট অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি শুক্রবার (৯ আগস্ট) খোলাচিঠি দেয়।
চিঠিতে দাবী করা হয়, বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার সময় ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, "অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক নারী নিগৃহিত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও। মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চাই।"
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগসহ, বাংলাদেশের নানা স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বাংদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে প্রবাসীরা।