শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

রাজধানী ঢাকার উত্তরার এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা।

বুধবার (১৪ অগাস্ট) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী অভিযোগ আমলে নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানাকে মামলাটি রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আইনজীবী সোহেল রানা দাবি করেছেন, উত্তরা এলাকা থেকে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আটক করা হয়। পরে তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নানা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।

মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া, র‌্যাবের কিছু সদস্যকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের গুলিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার মুদিদোকানি আবু সায়েদ নিহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ আদেশ দেন।

এ মামলার অন্য অভিযুক্তরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এ ছাড়া মামলার অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আরও কয়েকজন।

মামলায় আমির বলেন, ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে আবু সায়েদ নিহত হন। আইজিপি ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ জনতার ওপর গুলি চালায়।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় বসবাস করেন। অভিযোগে আমির আরও বলেন, এই মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করতে পারছে না নিহত ব্যক্তির পরিবার।

জুলাই মাসের এক তারিখে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভে পরিণত হয়। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়ে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়।

শেখ হাসিনা ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে এক গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। সেদিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৯ অগাস্ট বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের বাসভবনে হামলা এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসহ শত শত ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হাসিনার পতনের পরের দুই দিনে দেশে অন্তত ২৩২ নিহত হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।