শেখ হাসিনার বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে অগ্নি সংযোগের জন্য বিচার দাবী

ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পুড়িয়ে দেয়ার পরের দৃশ্য। ফটোঃ ১০ অগাস্ট, ২০২৪।

বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পুড়িয়ে দেয়ার জন্য “দেশবাসীর কাছে” বিচার চেয়েছেন।

হাসিনার বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদের ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত এই বিবৃতিতে হাসিনা বলেন জাদুঘর পুড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অবমাননা করা হয়েছে।

“চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি।

“লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে । আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই,” হাসিনা বলেন।

হাসিনা ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাবার পর ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাসায় হামলা হয়। সেদিন সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বঙ্গভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

‘জাতীয় শোক দিবস’

হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে ১৫ অগাস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য তাঁর সমর্থকদের বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুল দেয়ার আহ্বান জানান।

“আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সাথে ভাব গম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট পালন করুন,” তিনি বলেন। “বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্প মাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।”

ফাইল ফটোঃ ঢাকার এক ফটো ফ্রেমিং দোকানে ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর তোলা ছবিতে শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একাংশ ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এই ভবনে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করে। শেখ হাসিনা এবং বোন রেহানা তখন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ১৫ অগাস্ট সাধারণ ছুটি ঘোষণা সহ দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে।

তবে ডঃ মুহাম্মাদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মঙ্গলবার ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়।

জুলাই-অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার

জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবীতে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, সেই বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক প্রাণহানির জন্য শেখ হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে “নাশকতাকে” দায়ী করেন।

যদিও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যুর জন্য মূলত পুলিশ এবং আওয়ামী লিগ কর্মীদের দায়ী করা হয়, হাসিনা বলেন, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী “সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।”

“আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সাথে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি,” তিনি বলেন।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবী করেছে।