এক ব্যক্তির শাসনের পুনরাবৃত্তি না ঘটার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার

বদিউল আলম মজুমদার

দেশে যেন আবার এক ব্যক্তির শাসন ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কাজ ও পদক্ষেপ নিতে হবে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার তিনি এসব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আদিত্য রিমন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান তিনটি অগ্রাধিকার কি হওয়া উচিত?

বদিউল আলম মজুমদারঃ প্রথম অগ্রাধিকার হবে একটা কার্যকর সরকার গঠন করা। তার অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠন করা। একইসঙ্গে প্রশাসন ও রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থাগুলো ঠিক করতে হবে। যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, আদালত থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো মোটামুটি কার্যকর করতে হবে।

দ্বিতীয় হচ্ছে, দুর্বৃত্তদের বিচার করা। এটা যত দ্রুত করা যাবে ততই ভালো হবে।

তৃতীয় হচ্ছে, দেশে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এখন তিনি চলে যাওয়ার পর সবকিছু ভেঙে পড়লো। এটার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেটার নিশ্চিত করা। তার জন্য সংবিধান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে।

আমাদের নিরাপদ সড়কের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাদের উত্তরসূরিরা এখনকার কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সুতরাং রাষ্ট্রকে মেরামত করতে যাতে এই আন্দোলনের ফসল জনগণের কাছে পৌঁছে। এটাকে এক অর্থে বলা যায় যে, আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আমাদের প্রথম স্বাধীনতা এসেছিলো ১৯৭১ সালে। সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ হয়েছিল। তার থেকে আমরা এখন যোজন-যোজন দূরে। বস্তুত আমরা এখন পথহারা জাতি। এখন যেন এই সুফলগুলো আমাদের ঘরে পৌছাঁতে পারে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সর্বোচ্চ কতদিনের মধ্যে একটি অবাধ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হওয়া দরকার?

বদিউল আলম মজুমদারঃ আমি তো জ্যোতিষী নই, কিভাবে বলবো? তবে, রাষ্ট্র সংস্কারের এই কাজগুলো করতে তাদের যতদিন লাগে। এগুলো করতে সময় লাগবে। আমাদের কাছে তো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, দৈত্য এসে করে দিবে। আবার কতগুলো জিনিস উপরওয়ালার কাছে ছেড়ে দিতে হয়, অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সুতরাং নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুন্সিয়ানার ওপর। আবার আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো ভূমিকার ওপর। তাই এই বিষয়টি পুরোপুরিভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এখনই ক্ষমতার মসনদে বসতে চায়, তাহলে এই সরকার কোনও সময়ই পাবে না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এমন একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান পরিবর্তন করে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের বিধান কি সংবিধানে স্থায়ী ভাবে সংযোজন যথেষ্ট বলে মনে করেন? নাকি প্রথমে একটি সংবিধান সভা নির্বাচন করে সেখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে একটি নতুন সংবিধান তৈরী করে তার আলোকে নতুন নির্বাচন দেয়া উচিত?

বদিউল আলম মজুমদারঃ রাষ্ট্র মেরামতের সবগুলো কাজ এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। আবার চাইলে তাদেরকে ১ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষমতা থেকে ফেলে দিতে পারবে ছাত্ররা এবং বিদেশীরাও। আমি যেটা মনে করি, তারা যেটা করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটা আলাপ-আলোচনা করে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা বা বন্দোবস্ত। গত নির্বাচনের আগে আমরা সুজনের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলাম, যেটা জাতীয় সনদ। এই রকম একটা রাজনৈতিক মীমাংসা হতে হবে, যার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। তারপর যে সরকার আসবে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে, এই অঙ্গীকার করাতে হবে।