গাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ৮০ জন নিহত হবার পর আরও এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাবার নির্দেশ

গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরে যাবার ইসরায়েলি নির্দেশের পর খান ইউনিসের হামাদ সিটিতে একজন ফিলিস্তিনি লোক তার সন্তানকে কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন। ফটোঃ ১১ অগাস্ট, ২০২৪।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রবিবার গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আরও লোকজনকে সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছে। এলাকা ছেড়ে দেবার এই সর্বশেষ আদেশ আসে শনিবারে আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহার করা একটি স্কুলে মারাত্মক বিমান হামলায় অন্তত ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হবার পর।

ইসরায়েল যেসব এলাকায় আগে ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের সাথে লড়াই করেছিল, সেসব ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় ইসরায়েলই সৈন্যরা আবার ফেরত যাচ্ছে, এবং বার বার ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছেড়ে চলে যাবার আদেশ দিচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শনিবার গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত গাজা সিটির তাবিন স্কুলে হামলা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, স্কুলের প্রাঙ্গণে মসজিদটি হামাসের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল এবং এই হামলায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ১৯ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক এই স্কুলে কোনো হামাস যোদ্ধা উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নামাজের সময় মসজিদে হামলা

গাজায় আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলে শনিবার ইসরায়েল বিমান হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত ও প্রায় ৫০ জন আহত হন। দশ মাসের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, এমন হামলার মধ্যে অন্যতম এই ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ভবনের ভেতর অবস্থিত একটি মসজিদ নামাজের সময় আক্রান্ত হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজার “স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক হামলা” চালাচ্ছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ এই হামলা। চৌঠা জুলাই থেকে শুরু করে অন্তত ২১টি স্কুল হামলার শিকার হয়েছে, এবং এসব হামলায় নারী ও শিশুসহ শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।

শনিবারের হামলার পর সংস্থাটি মন্তব্য করে, “অনেকের জন্য স্কুল হচ্ছে সর্বশেষ নিরাপদ আশ্রয়।”

গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ফাদেল নাঈম এপিকে জানান, তারা ৭০টি মরদেহ ও আরও ১০ ব্যক্তির শরীরের অংশবিশেষ গ্রহণ করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে আরও ৪৭ ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আবু আনাস জানান, কোনো ধরনের হুশিয়ারি ছাড়াই সূর্যোদয়ের আগে হামলা শুরু হয়। এ সময় মানুষ নামাজ পড়ছিলেন।

“কিছু মানুষ নামাজে ছিলেন। কেউ কেউ ধোয়ামোছা করছিলেন এবং কেউ কেউ ওপরের তলায় ঘুমাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বয়স্করাও ছিলেন”, তসবিহ হাতে বলেন আনাস। “কোনো হুশিয়ারি ছাড়াই তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে। প্রথমে একটি, পরে আরেকটি। আমরা শুধু তাদের মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করতে পেরেছি।”

যুক্তরাষ্ট্র বলছে তারা বেসামরিক মানুষ নিহতের সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র শন স্যাভেট এক বিবৃতিতে বলেন, “বেসামরিক ব্যক্তিরা মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে হতাহত হচ্ছেন।”