ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামাসের নবনিযুক্ত নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার আহ্বান জানিয়েছেন। লেবাননে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর একজন কমান্ডার এবং গত সপ্তাহে তেহরানে সিনওয়ারের পূর্বসূরিকে হত্যার পর ইসরায়েল ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিশোধের বিরুদ্ধে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম এক্স-এ বলেন, সিনওয়ারের নিয়োগ “তাকে দ্রুত নির্মূল করার এবং এই জঘন্য সংগঠনটিকে পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে ফেলার আরেকটি বাধ্যতামূলক কারণ।” সিনওয়ারকে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একজন প্রধান সন্ত্রাসী বলেছেন।
ইসরায়েল হামাসের পূর্ববর্তী নেতা ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তবে ৩১ জুলাইয়ে তার মৃত্যুতে ইরানী নেতারা ইসরায়েলকে দোষারোপ এবং দেশটির বিরুদ্ধে তাদের জবাব দেবার অঙ্গীকার করে।
সিনওয়ার ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম স্থপতি। বুধবার, হামাস সিনওয়ারকে নতুন নেতা হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। কাটজ বলেন, এই পদক্ষেপটি “বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায় যে ফিলিস্তিন সমস্যাটি এখন সম্পূর্ণরূপে ইরান এবং হামাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
কাটজ আরও বলেন, ইরানকে আরেকটি "চরমপন্থী ঘাঁটি" প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত রাখতে ইসরায়েলকে অবশ্যই ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।
কাটজ বলেন, "অন্য যে কোনও কিছু হলে এই অঞ্চলে আরেকটি ইরানী ঘাঁটি তৈরি হবে। এটি বিশ্ব এবং সমস্ত আঞ্চলিক দেশের সামনে বিস্ফোরিত হবে।"
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পশ্চিম তীরে বারবার অভিযান চালিয়েছে। এই হামলার লক্ষ্য জঙ্গি কার্যকলাপ এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আক্রমণকে বাধাগ্রস্ত করা। অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি গুলিতে প্রায় ৬০০ জন মানুষ নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর নেতা গত সপ্তাহে বৈরুতে ইসরায়েলের একজন কমান্ডার, ফুয়াদ শুকুরকে হত্যার প্রতিক্রিয়া জানানোর অঙ্গীকার দেয়। এতে আঞ্চলিক সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যার ফলে আন্তর্জাতিক আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মঙ্গলবার বলেন, এই অঞ্চলের প্রত্যেকেরই “এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যা উত্তেজনাকে শান্ত করবে, বৃদ্ধি করবে না।”
ব্লিংকেন বলেন, "আমরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আক্রমণ থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করতে থাকব, ঠিক যেমন আমরা আমাদের সৈন্যদের রক্ষা করব। তবে এই অঞ্চলের প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত যে আরও আক্রমণ কেবলমাত্র সবার জন্য সংঘাত, অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাকে বৃদ্ধি করে। আর আরও আক্রমণ শুধুমাত্র বিপজ্জনক ফলাফলের ঝুঁকি বাড়ায় যা কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না এবং কেউ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।"
ব্লিংকেন বলেন, গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটানো এবং এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ হল গাজায় দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা।
হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার বলে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে গাজা যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা আবার সচল করা নিয়ে কথা বলেন। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নেতারা “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে একমত হয়েছেন।”
ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে। ঐ হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজায় প্রায় ৪০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, এদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। কিন্তু, ইসরায়েল বলে, মৃতের সংখ্যার মধ্যে তাদের হত্যাকৃত হাজার হাজার হামাস যোদ্ধা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।