মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি বৃদ্ধি করছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্টকে দক্ষিণ চীন সাগরে দেখা যাচ্ছে; (যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনী প্রকাশিত ছবি) ৪ জুলাই, ২০২৪।

ইসরায়েলের সমর্থনে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে, মধ্যপ্রাচ্য ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে রণতরী ও ফাইটার জেট পাঠানো হচ্ছে। কেননা, উভয় দেশ ইরানের সম্ভাব্য সামরিক হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন শুক্রবার গভীর রাতে একটি আদেশে স্বাক্ষর করেন। এতে তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিছু অংশে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সরঞ্জাম ও সক্ষমতা স্থানান্তরের আদেশ দেন। গত সপ্তাহে লেবাননে নিহত হন শীর্ষ হেজবুল্লাহ কমান্ডার; আর ইরানের মাটিতে নিহত হন হামাস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতা। এর পর, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অবস্থিত ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে লয়েড অস্টিন এই আদেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, আক্রমণ সক্ষম বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কনকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠনো। আর এই রণতরীর সঙ্গে ব্যালিস্টিক মিসাইল ভূপাতিত করতে সক্ষম নৌবাহিনীর ক্রুজার ও ডেস্ট্রয়ার মেতায়েন করা। এর বাইরে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আরো একটি ফাইটার জেট স্কোয়াড্রন পাঠাচ্ছে। এছাড়া, ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য অনুমতি দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে।

কবে নাগাদ এসব জাহাজ ও বিমান সেখানে মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে পেন্টাগন কিছু জানায়নি। তবে শুক্রবার এক বিবৃতিতে পেন্টাগন বলেছে, "ইরান বা ইরানের অংশীদার এবং প্রক্সি গোষ্ঠী গুলোর পক্ষ থেকে ঐ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রশমিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই অঞ্চলে আরো সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য হলো, "যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সমর্থন বৃদ্ধি করা এবং বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।”


ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সাথে ফোনে কথা বলার সময় অস্টিন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। এই ফোনালাপের কয়েক ঘন্টা পর, নতুন আদেশগুলো আসলো।

পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং ব্রিফিংয়ে বলেন, "প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি লৌহদৃঢ় সমর্থনের কথা আবারো উল্লেখ করেন। তিনি (লয়েড অস্টিন) যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চলমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষামূলক বাহিনীর প্রকৃতি বদলের জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। সাবরিনা সিং আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “এসব করা হচ্ছে ইসায়েলের সুরক্ষাকে সহায়তা করার জন্য।”

তিনি বলেন, ৭ অক্টোবর হামাস সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েলের প্রতি পেন্টাগনের সমর্থনের অর্থ হলো, "ইরান, লেবাননের হেজবুল্লাহ এবং অন্যান্য ইরান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ সন্দেহাতীতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংকল্পের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত।”

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায়, হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকুর নিহত হওয়ার পর এবং হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ খুন হওয়ার পর, গত সপ্তাহে এই অঞ্চলে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভবেবৃদ্ধি পেয়েছে। খুন হওয়ার সময় হানিয়াহ ইরানের প্রেসিডেন্টের অভিষেক উদযাপন করতে তেহরানে অবস্থান করছিলেন।

ইসরায়েল প্রকাশ্যে হানিয়াহ’র মৃত্যুর দায় স্বীকার করেনি। তবে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের ওপর দায় চাপিয়েছেন এবং প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আহবান জানান। তিনি একটি পোস্টে বলেন, "প্রতিশোধ নেয়া আমাদের কর্তব্য।”

ইরানের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তারা হামাস, হেজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাক ও সিরিয়ার মিলিশিয়াসহ ইরানের প্রধান প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে পরিকল্পনার জন্য এই বৈঠক বলে জানান ইরানের কর্মকর্তারা।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, "ইরান এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।"

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তেজনা যাতে আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত না হয়, সে দিক বিবেচনা করে ওয়াশিংটন কখনো ইসরায়েলকে সুরক্ষাহীন পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেছেন।

এ সময়, বাইডেন "ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ড্রোন হুমকির বিরুদ্ধে সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ এবং নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামূলক সামরিক শক্তি বৃদ্ধির” বিষয়ে নেতানিয়াহুকে অবহিত করেন।

মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো অতিরিক্ত জাহাজ এবং যুদ্ধবিমান ছাড়া, সেই অঞ্চলে পেন্টাগনের ইউএস মেরিন সেনাদের একটি উভচর দল প্রস্তুত রয়েছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪,০০০ সৈন্য রয়েছে।

বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট এখন মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউএসএস আব্রাহাম লিঙ্কন এ অঞ্চলে পৌঁছানোর পর ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট ফিরে যাবে।