লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উপর ইসরায়েলের বিরল এক বিমান হামলায় অন্তত দু'জন নিহত হয়েছে। আক্রমনের ফলে লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের উত্তেজনা আরও এক ধাপ বৃদ্ধি পেল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বলেছে তারা একজন জঙ্গি কমান্ডারকে লক্ষ্য করে বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। তারা দাবী করে, ঐ কমান্ডার সপ্তাহান্তে ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমিতে রকেট হামলার জন্য দায়ী, যে হামলায় ১২ জন শিশু ও কিশোর নিহত হয়।
মেজদাল শামস গ্রামে রকেট হামলার জন্য ইসরায়েল লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে অভিযুক্ত করে। হিজবুল্লাহ শনিবারের হামলার সাথে কোন সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলি থেকে বড় বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। ঐ এলাকায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। হিজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দু’জন নিহত হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে গণমাধ্যমের খবরে হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে ফুয়াদ সু’কর হিসেবে শনাক্ত করা হয়, কিন্তু তার সম্পর্কে নিশ্চিত করে কোন কিছু জানা যাচ্ছে না।
সৌদি আরবের সংবাদ সূত্র আল-হাদাথ জানায়, সু’কর বেঁচে আছেন। কিন্তু ইসরায়েলি সংবাদ সাইট ওআইনেট ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র উদ্ধৃত করে জানায়, “এখানে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যে হিজবুল্লাহ কর্মকর্তাকে নির্মূল করা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ধারনা করা হয় সু’কর হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর সামরিক উপদেষ্টা এবং তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা চিহ্নিত হিজবুল্লাহর সাথে দীর্ঘ দিন ধরে সম্পৃক্ত। তিনি গোষ্ঠীর অপারেশন বিভাগের প্রধান ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। তাকে ১৯৮৩ সালে বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্র মারিন বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার সন্দেহ আসামি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস, যারা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের সন্ধান করে, তাদের তথ্য অনুযায়ী সু’করকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ লক্ষ ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
হিজবুল্লাহ’র একজন কর্মকর্তা এবং দলের টেলিভিশন স্টেশন জানায়, মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণে এক এলাকায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায় যেখানে হিজবুল্লাহর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। হামলায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দফতর তাৎক্ষনিক কোন বিবৃতি দেয় নি, তবে হামলার কয়েক মিনিট পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের ছবি বিতরণ করা হয়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানায়, বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলি হারেক হ্রেইক-এর উপর হামলায় কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কোন হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল কিনা, তা তাৎক্ষনিকভাবে পরিষ্কার ছিল না।
হামলায় একটি হাসপাতালের পাশে একটি ভবনের অর্ধেক ধসে পড়ে। হাসপাতালেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে, এবং আশে-পাশের রাস্তায় ভাঙ্গা কাঁচ এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য কর্মীদের ভবন থেকে আহত ব্যক্তি বের করে নিয়ে আস্তে দেখা গেছে। তবে তাৎক্ষনিক ভাবে কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় নি।
'অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে'
এলাকার এক বাসিন্দা, যিনি হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে নিজের বাসায় ছিলেন, তিনি বলেন বিস্ফোরণের ফলে ধুলায় “সবকিছু ঢেকে যায়,” এবং তার ছেলের অ্যাপার্টমেন্টে কাঁচ ভেঙ্গে যায়।
“তারপর লোকজন রাস্তায় নেমে পড়ে,” তিনি বলেন। “সবার পরিবার আছে। তারা তাদের খোঁজ নিতে যায়। এখানে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।”
তিনি এই উত্তেজনাপূর্ণ সময় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে কথা বলেন।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, দক্ষিণ বৈরুতের শহরতলিতে একটি ড্রোনের মাধ্যমে তিনটি রকেট ছুঁড়ে আক্রমণ চালানো হয়।
ইসরায়েল জানুয়ারিতে শেষবার বৈরুতে হামলা করেছিল, যখন বিমান হামলায় হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সালেহ আরুরি নিহত হয়। সেই হামলা ছিল ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে ইসরায়েলের সাথে হিজবুল্লাহর ৩৪-দিনের যুদ্ধের পর বৈরুতে প্রথম হামলা।