পাকিস্তানি মন্ত্রী ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল নিশ্চিত করেছেন, সেন্সরশিপ নিয়ে উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান

ফাইল-পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একটি স্থানীয় ক্যাফেতে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ৭ মার্চ, ২০১২৷ ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই পাকিস্তান জানায় তারা একটি ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল চালু করছে, যা সমালোচক এবং ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা ভিন্নমত নীরব করার জন্য ব্যবহার করা হবে বলে আশঙ্কা করছেন৷

পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শুক্রবার নিশ্চিত করেন, দেশটির সরকার একটি ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল চালু করছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি যে অনলাইনে বাকস্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন এটি সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করবে।

দেশটির প্রতিমন্ত্রী শাজা ফাতিমা খাজা ভিওএ-কে বলেন, “এটি একটি পদ্ধতি । এটা কোনো ভৌত প্রাচীর নয় যেটা আমরা স্থাপন করছি। এটি কোনও কিছুতেই বাধা দিবে না।”

বর্তমানে ওই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এই জুনিয়র মন্ত্রী দেশব্যাপী ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, দেশটি প্রতিদিন সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

খাজা এর আগে একটি সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভিওএ-এর প্রশ্নের জবাবে বলেন, “যদি একটি সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, একটি সক্ষমতা, সরকারের কাছে আসে, তবে এটি একটি ভাল জিনিস। ”

পাকিস্তান তাদের সর্বসাম্প্রতিক বাজেটে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য ৭ কোটি ডলারেরও বেশি বরাদ্দ করেছে। সমালোচক এবং ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন যে দেশব্যাপী ফায়ারওয়াল ভিন্নমত দমন করতে ব্যবহার করা হবে।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস ধরে দেশব্যাপী সেন্সরশিপ ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছে কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে দ্বিধা করছিল।

জানুয়ারিতে একটি নিউজ চ্যানেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে, পাকিস্তানের তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকার এই ব্যবস্থাটি ঘোষণা করেন।

কাকার বলেন, "খুব শীঘ্রই দেশব্যাপী একটি ফায়ারওয়াল মোতায়েন করা হবে।"

একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা জুন মাসে ভিওএ উর্দুকে নিশ্চিত করেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সরকার ইন্টারনেট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং পাকিস্তানে অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য উপলব্ধ সামগ্রী ফিল্টার করার জন্য দেশব্যাপী একটি সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য কাজ করছে।

শরীফের সরকার এ বিষয়টি পরিস্কার করে জানানোর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু, তারা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রবিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমি মনে করি যদি একটি ফায়ারওয়াল সিস্টেম থাকে তবে এটি সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা সুরক্ষা সম্পর্কে হবে। আমি যতদূর জানি বাকস্বাধীনতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। ”

পাকিস্তান চীনের কাছ থেকে একটি অনলাইন সেন্সরশিপ সরঞ্জাম আনবে এমন খবর মন্ত্রী খারিজ করে দেন।

ডিজিটাল সন্ত্রাসবাদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে বন্দি রেখে তার দলের উপর ক্রমাগত দমন অভিযান চালানোর পিছনে কথিত ভূমিকার জন্য পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অনলাইনে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার মুহুর্তে ফায়ারওয়ালের খবরটি আসে।

রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে চলা দেশটির সামরিক বাহিনী সম্প্রতি অনলাইন সমালোচকদের জন্য “ডিজিটাল সন্ত্রাসী” শব্দটি ব্যবহার করছে।

পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সন্ত্রাসীরা যেমন তাদের দাবি পূরণের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করে, তেমনি ডিজিটাল সন্ত্রাসীরা তাদের দাবি পূরণের জন্য হতাশা তৈরি করতে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল এবং কম্পিউটারে নেতিবাচক প্রচার এবং ভুয়া খবর পোস্ট করে।”

চৌধুরী বলেন, সামরিক বাহিনী ডিজিটাল সন্ত্রাসীদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

তিনি খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির নাম না নিয়ে একটি “নির্দিষ্ট” রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করেন। এই দলের একটি শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে।

এই সপ্তাহে, পুলিশ পাকিস্তানের রাজধানীতে পিটিআই-এর সদর দফতরে অভিযান চালায়। তারা “রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা” চালানোর অভিযোগে দলটির প্রধান মুখপাত্র এবং অন্যান্য মিডিয়া দলের সদস্যদের আটক করে।

সেবা ব্যাহত

বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানি মিডিয়া আউটলেট দ্য নিউজ জানায়, ব্যবহারকারীরা মেটা-মালিকানাধীন মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য আদানপ্রদানে যে সাম্প্রতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা পরীক্ষামূলকভাবে ফায়ারওয়াল চালানোর ফলে ঘটে।

ফায়ারওয়ালের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে, স্বতন্ত্র পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কোনও রিপোর্ট তারা পায়নি।

মালাহাত ওবায়েদ ভিওএ-কে বলেন, “আমাদের সিস্টেম ঠিক ছিল। এটি যথারীতিভাবে চলমান ছিল। এটি কোনও জায়গায় নষ্ট হয়নি।” তিনি আরও বলেন, ব্যবহারকারীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে হতে পারে।

সাইবারসিকিউরিটি নজরদারি সংস্থা নেটব্লক্স এই বছরে এই পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করার পাঁচটি ঘটনা রেকর্ড করেছে। ফেব্রুয়ারীতে সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে এই বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা দেখা দেয়।