রিপাবলিকান পার্টির মহাসম্মেলনে ট্রাম্পের ভাষণ: অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ

রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আগামি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ভাষণ দিচ্ছে। মিলওয়াকি। ১৮ জুলাই , ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি থেকে আবার প্রার্থী হয়েছেন, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে আবারও আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর মনোনয়ন গ্রহণ করেন এবং গত শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় তাঁকে হত্যা-প্রচেষ্টার পর আজই প্রথম ভাষণ দিলেন। আজ ছিল মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির চারদিন ব্যাপী কনভেনশনের চতুর্থ ও শেষ দিন। ট্রাম্প অবশ্য কানে ব্যান্ডেজ পরে আগের তিনদিনও এই কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন।

তাঁর জীবননাশের এই প্রচেষ্টার মাত্র পাঁচদিন পর ট্রাম্প এই কনভেনশনে দেওয়া তাঁর ভাষণের শুরুতেই সকলের একতাবদ্ধ হবার কথা বলেন । সাধারণ ভাবে তাঁর ভাষণে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যে তীব্র সমালোচনা থাকে, এই ভাষণ ছিল তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন, যদিও ভাষণের পরের দিকে তিনি বাইডেন ও ডেমক্র্যাটিক প্রশাসনে সমালোচনা করেন। তবে শুরুতে তিনি বলেন সব ধরণের বিভাজন দূর করে সমৃদ্ধি এবং একতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রাম্প বলেন তিনি অর্ধেক আমেরিকার হয়ে কথা বলছেন না, সকল আমেরিকানের হয়েই কথা বলছেন ।

৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ আজ রাতে আমার এখানে থাকার কথা নয়। রক্ত ঝরছিল সর্বত্র তবুও এক অর্থে আমি মনে করি আমি নিরাপদ ছিলাম কারণ ঈশ্বর ছিলেন আমার পাশে”। সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার শ্রোতা নীরবে তাঁর কথা শোনেন। ৭৮ বছর বয়সী এই সাবেক প্রেসিডেন্ট দমকল বাহিনীর সাবেক প্রধান কোরি কম্পেরেটোরের স্মরণে নীরবতা পালনের আহ্বান জানান। ট্রাম্পকে হত্যা প্রচেষ্টার দিনে কোরি ঘাতকের গুলির আঘাতে নিহত হন, আহত হন আরও দু’জন । তিনি তাঁদের সকলের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানান।

ট্রাম্প বলেন, “ আমাদের সমাজের বিভক্তি ও বিভাজন শেষ করতে হবে। আর আমরা সেটা দ্রুতই করবো। আমেরিকান হিসেবে আমরা এক অভিন্ন নিয়তির বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা একত্রেই জেগে উঠি তা না হলে আমাদের পতন ঘটবে । আমি সম্পুর্ণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি , অর্ধেক আমেরিকার জন্য নয় কারণ অর্ধেক আমেরিকাকে জয় করার জন্য , কোন জয়ই নয়”।

ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ এই সময়ে যখন আমাদের রাজনীতি আমাদের বিভাজিত করে , এখনই সময় এটা মনে করার যে আমরা সকলেই একই দেশের নাগরিক। ঈশ্বরের অধীনে আমরা একটি জাতি, অবিভাজিত, এখানে সকলের জন্যই মুক্তি ও সুবিচার আছে”।

তবে দ্রুতই ডেমক্র্যাটদের তিনি আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “ডেমক্র্যাটিক দলকে অবিলম্বে বিচার বিভাগকে তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে, তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গণতন্ত্রের শত্রু বলে উল্লেখ করা বন্ধ করতে হবে। কারণ তা সত্য নয় । বস্তুত আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে আমাদের জনগণের জন্য গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে”।

তাঁর ভাষণে তিনি বাইডেনকে আক্রমণ করেন তবে বলেন যে তিনি বাইডেনের নাম একবারই উচ্চারণ করবেন । ট্রাম্প বলেন, “ আপনারা যদি ইতিহাসের সব চেয়ে খারাপ দশ জন প্রেসিডেন্টের কথা বলেন তাহলে তারা সকলে মিলে যে ক্ষতি করেছে, বাইডেন একাই সে ক্ষতি করেছেন”। ট্রাম্প তাঁর ভাষণের পরের দিকে বাইডেনকে “এই ব্যক্তি” বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে ছিল অর্থনীতি এবং অভিবাসন প্রসঙ্গ। তিনি বলেন যে তিনি, “ জাতীয় ঋণ কমিয়ে আনবেন এবং আপনাদের কর আমরা হ্রাস করবো”। তিনি বলেন তাঁর আমলে আমেরিকা আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভর করবে না, বরঞ্চ বিদেশীদের এখানে এসেই পণ্য প্রস্তুত করতে হবে যাতে আমাদের লোকজন কাজ পায়। তিনি মূল্যস্ফীতি হ্রাস করার উপর জোর দেন।

ট্রাম্প বলেন তিনি পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প থেকে রাস্তাঘাট, সেতু ও বাঁধ নির্মাণের দিকে অর্থ ব্যয় করবেন । তিনি “ গ্রীন নিউ স্ক্যাম” বলে পরিবেশ প্রকল্পের সমালোচনা করেন। তিনি আরও বলেন যে বৈদ্যুতিক গাড়ির পক্ষে প্রচেষ্টা নেয়া তিনি বন্ধ করবেন।

ট্রাম্প কোন উপাত্ত উল্লেখ না করেই বলেন অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্প্যানিক আমেরিকানদের এবং ইউনিয়ন শ্রমিকদের ও “ কাজ নিয়ে নিচ্ছে”। ট্রাম্প বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে বলেন যে তাঁর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বস্তুত কোন যুদ্ধে জড়াতে হয়নি অথচ বৈরি পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে ভয় পেয়েছে।

ট্রাম্প তাঁর ভাষণের এক সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেন।

ট্রাম্পের ভাষণের আগে তাঁর পুত্র এরিক ট্রাম্প তাঁর বাবার অবিচল সাহসের প্রশংসা করেন।

সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ কন্যা ইভাংকা ট্রাম্পও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তাঁরা কোন ভাষণ দেননি।